ইউরোপে ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণে আফ্রিকানদের ৭০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি, উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বিদেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক আফ্রিকান নাগরিকদের জন্য ভিসা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়াটি অনেক সময় বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৩ সালেই ভিসা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় আফ্রিকান নাগরিকরা প্রায় ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হারে ৭৯০ কোটি টাকার বেশি) ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ভিসা আবেদন ফি বাবদ এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তাদের গচ্চা দিতে হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ইউরোপের শেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য ভিসা আবেদন করলে, তা প্রত্যাখ্যাত হলেও ফি ফেরত পাওয়া যায় না। প্রতিটি আবেদনের জন্য একজন আবেদনকারীকে প্রায় ৯০ ইউরো (১০০ মার্কিন ডলার বা ১১,৩০০ টাকার বেশি) পরিশোধ করতে হয়।
লণ্ডন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘লাগো কালেক্টিভ’-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আফ্রিকার দেশগুলো।
সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা মার্তা ফরেস্তি জানান, দরিদ্র দেশগুলোর মানুষজন ধনী দেশগুলোতে ভিসা পাওয়ার জন্য অর্থ খরচ করে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ভিসা পান না।
যেমন, ঘানা, সেনেগাল এবং নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলোতে ভিসা প্রত্যাখানের হার প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এই তথ্য ভিসা প্রক্রিয়ার মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য প্রমাণ করে।
পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র নাইজেরিয়ার প্রায় ৫০ হাজার আবেদনকারীর ভিসা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এর ফলে দেশটির মানুষ প্রায় সাড়ে ৪ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫৬ কোটি টাকার বেশি) ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
ভিসা প্রত্যাখ্যানের শিকার হওয়া অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও ভিসা পাননি।
ক্যামেরুনের নাগরিক জ্যাঁ এমবুলের ঘটনা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। তিনি জানান, ফ্রান্সে জন্ম হলেও তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল, যদিও তার স্ত্রীর ভিসা অনুমোদন করা হয়েছিল।
আবেদনকারীদের অনেকেই বলছেন, তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যানের পেছনে কর্তৃপক্ষের অস্পষ্ট কারণ ছিল। অনেক ক্ষেত্রে, আবেদনকারীরা তাদের ভ্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে যথেষ্ট প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
তবে, অনেকে মনে করেন, ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু লুকানো বৈষম্য কাজ করে। কারো কারো মতে, অতীতে ভিসাধারীদের অনিয়মিত আচরণের কারণেও এমনটা হতে পারে।
এদিকে, যুক্তরাজ্যে ভিসা ফি-ও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে যেখানে ভিসা ফি ছিল ১০০ পাউন্ড, সেটি বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ১২৭ পাউন্ড (প্রায় ১৭০ মার্কিন ডলার বা ১৯,০০০ টাকার বেশি)।
এর ফলে ভিসা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণে ক্ষতির পরিমাণও বেড়েছে। ‘লাগো কালেক্টিভ’-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণে নাইজেরীয়দের অতিরিক্ত প্রায় ২ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২.৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৯ কোটি টাকার বেশি) ক্ষতি হয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, তারা প্রতিটি ভিসার আবেদনকারীর বিষয়টি আলাদাভাবে বিবেচনা করে। আবেদনকারীর ভ্রমণের উদ্দেশ্য, আর্থিক সঙ্গতি এবং দেশে ফেরার সম্ভাবনা ইত্যাদি বিষয়গুলো তারা খতিয়ে দেখেন।
তবে, অনেক ভুক্তভোগী মনে করেন, ভিসা প্রক্রিয়াকরণে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং এর ফলে অনেক যোগ্য ব্যক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন