শিরোনাম: উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সার, ঝুঁকিতে মধ্যবয়সীরা
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবয়সী প্রজন্মের (জেনারেশন এক্স ও মিলেনিয়াল) মানুষের মধ্যে অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সারের ঝুঁকি তাদের বাবা-মায়ের প্রজন্মের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং পরিবেশগত কারণের প্রভাবে এমনটা হতে পারে।
অ্যাপেন্ডিক্স, যা আমাদের পেটের ডান দিকে অবস্থিত, ক্ষুদ্রান্ত্রের সঙ্গে যুক্ত একটি থলির মতো অঙ্গ। এর প্রধান কাজ হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সহায়তা করা। সাধারণত, প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১ থেকে ২ জনের এই ক্যান্সার শনাক্ত হয়। তবে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৪১ থেকে ১৯৪৯ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া মানুষের তুলনায়, ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া মানুষের মধ্যে অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সারের হার তিন গুণের বেশি এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া মানুষের মধ্যে চার গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই গবেষণাটি করেছেন ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস হেলথ সায়েন্স সেন্টারের গবেষকরা। তাঁরা ১৯৭৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ে অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সার শনাক্ত হওয়া ২০ বছর বা তার বেশি বয়সী ৪,৮৫৮ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের তথ্যভাণ্ডার থেকে এই ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ক্যান্সার বেড়ে যাওয়ার কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশগত কিছু বিষয় এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। অতিরিক্ত ওজন, কম শারীরিক সক্রিয়তা, এবং খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়গুলোও ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
যেহেতু অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট কোনো স্ক্রিনিং পদ্ধতি নেই, তাই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা কঠিন। সাধারণত অন্য কোনো সমস্যার কারণে যখন অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করা হয়, তখনই ক্যান্সার ধরা পড়ে।
এই বিষয়ে নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারের বিশেষজ্ঞ ড. আন্দ্রেয়া সেরসেক জানিয়েছেন, “তরুণদের মধ্যে ক্যান্সার বৃদ্ধির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।” তিনি আরও বলেন, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো এর কারণ হতে পারে।
অ্যাপেন্ডিক্স ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো পেট বা শ্রোণি অঞ্চলে ব্যথা, পেট ফোলা, বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া। এই লক্ষণগুলো অনেক সময় সাধারণ অ্যাপেন্ডিসাইটিসের মতোই মনে হতে পারে। তাই, কোনো ব্যক্তির যদি এমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ক্যান্সার যদি ছড়িয়ে না যায়, তবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করা হয়। ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়লে কেমোথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে যেমন এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তেমনভাবে বাংলাদেশেও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই, স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন, সময় মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং শরীরের কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সচেতনতা এবং দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
তথ্য সূত্র: সিএনএন