যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা এখনো অধরা, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ভবিষ্যৎ কী?
ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি শান্তি আলোচনা শুরুর কোনো সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হলেও, কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, পরবর্তী বৈঠকের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এদিকে, উভয় দেশই একে অপরের ভূখণ্ডে ড্রোন হামলা অব্যাহত রেখেছে।
গত ১৬ই মে, ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উভয় পক্ষ ১০০০ জন করে যুদ্ধবন্দীকে বিনিময়ের বিষয়ে রাজি হয়। এটিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হলেও, বৃহত্তর অর্থে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে এটি খুব সামান্যই সাহায্য করেছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া তাদের গ্রীষ্মকালীন অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার লক্ষ্য হলো আরও বেশি ভূমি দখল করা।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি বলেছেন, মস্কো একটি ‘সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির’ রূপরেখা তৈরি করতে ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এর সঙ্গে ইউক্রেনের সেনা সমাবেশ বন্ধ ও পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করার মতো শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তুরস্কের বৈঠকে হওয়া বন্দিবিনিময়ের প্রস্তুতি চলছে, যা আলোচনার ফলস্বরূপ পাওয়া ‘একমাত্র বাস্তব ফল’ হতে পারে।
সংঘাতের এই পরিস্থিতিতে উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলার অভিযোগ এনেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা মস্কো অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাওয়া ১০৫টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
রাজধানী কিয়েভও ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মস্কোর তিনটি প্রধান বিমানবন্দরে শতাধিক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাশিয়া তাদের পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যাতে একটি শিল্পকারখানা, বিদ্যুতের খুঁটি এবং বেশ কিছু বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, রুশ সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় গোলার আঘাতে একজন নিহত ও দুইজন আহত হয়েছে।
পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার সেনারা সীমান্ত বরাবর একটি ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ তৈরি করতে চায়, যাতে ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালাতে না পারে। তবে এই নিরাপত্তা অঞ্চলের বিস্তারিত রূপরেখা তিনি জানাননি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হলো উভয় পক্ষের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ। রাশিয়া চাইছে ইউক্রেনের আরও বেশি অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে, অন্যদিকে ইউক্রেন চাইছে নিজেদের হারানো ভূমি পুনরুদ্ধার করতে।
এমন পরিস্থিতিতে, যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনা কবে নাগাদ শুরু হবে, তা বলা কঠিন।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।