যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধ করার সিদ্ধান্তের জেরে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে বেইজিং-এর পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানান, “শিক্ষাগত সহযোগিতার রাজনৈতিকীকরণকে চীন সবসময় বিরোধিতা করে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ কেবল তাদের ভাবমূর্তিকে বিশ্ব দরবারে কলঙ্কিত করবে।
চীনের সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকে এটিকে “যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের দুর্বলতা নিজেরাই তৈরি করা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, অনেকে মনে করছেন, এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুরনো নীতিরই ধারাবাহিকতা। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করাই ছিল হার্ভার্ডের মতো শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধান উপায়। এমন পরিস্থিতিতে হার্ভার্ডের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (DHS)-এর এই ঘোষণা, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং হোয়াইট হাউসের মধ্যে বিদ্যমান বিরোধের একটি স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। এছাড়া, এটি অভিবাসন নীতি কঠোর করার বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
আসলে, এই ঘটনা শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রেসিডেন্টের মধ্যেকার বিবাদ নয়, বরং এটি দুই পরাশক্তির মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফাটলেরই একটি অংশ। দীর্ঘদিন ধরে চীন থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেত।
কিন্তু বর্তমানে ভূ-রাজনৈতিকrivalry-এর কারণে সেই শিক্ষাগত সম্পর্কেও পরিবর্তন আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এক বিবৃতিতে জানান, “এই প্রশাসন হার্ভার্ডকে তাদের ক্যাম্পাসে সহিংসতা, ইহুদিবিদ্বেষ এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগসাজশের জন্য দায়ী করছে।
DHS-এর পক্ষ থেকে হার্ভার্ডের সঙ্গে চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সামরিক গবেষণা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংস্থার সম্পর্কের অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনকি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হার্ভার্ডের যোগাযোগের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় যদিও এই বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি, তবে তারা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ অব্যাহত রাখতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উল্লেখ্য, হার্ভার্ডে ১৪০টির বেশি দেশের শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করার ক্ষমতা দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়েরও একটি প্রধান উৎস।
হার্ভার্ডের এই সিদ্ধান্তের ফলে একদিকে যেমন বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধ হয়ে যাবে, তেমনই বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হতে হবে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি বিদেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আসে চীন থেকে। এই সিদ্ধান্তের ফলে চীনের অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
চীনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশটির প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বকে ধরে রাখা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা, চীনের শিক্ষার্থীরা তাদের সামরিক প্রযুক্তিসংক্রান্ত গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, চীনা শিক্ষার্থীদের ওপর এর প্রভাব বেশি পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে, বেশ কয়েকজন চীনা অধ্যাপক যারা যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতেন, তারা দেশে ফিরে গিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কারণ, অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে আগ্রহী।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতির কারণে তাদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, সে বিষয়েও অনেকে জানতে চাইবেন। এছাড়া, ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন