নারী অধিকার আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব সুসান ব্রাউনমিলার আর নেই। শনিবার, নব্বই বছর বয়সে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ব্রাউনমিলারের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা।
তিনি শুধু একজন লেখকই ছিলেন না, বরং ছিলেন নারীবাদী আন্দোলনের একজন অগ্রদূত। তাঁর লেখালেখি এবং কাজের মাধ্যমে তিনি সমাজের চিন্তাভাবনার পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
সুসান ব্রাউনমিলারের জন্ম ১৯৩৫ সালে নিউইয়র্ক শহরে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন বিক্রয়কর্মী এবং মা ছিলেন একজন সেক্রেটারি। তাঁদের পরিবারে সমাজ এবং রাজনীতির প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল, যা ব্রাউনমিলারের মধ্যেও দেখা যায়।
তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেন এবং পরবর্তীতে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন।
ব্রাউনমিলারের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ ছিল ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত ‘এগেইনস্ট আওয়ার উইল: মেন, উইমেন অ্যান্ড র্যাপ’ (Against Our Will: Men, Women and Rape)। এই বইটি যৌন নিপীড়ন এবং ধর্ষণ সম্পর্কে সমাজে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
তিনি দেখিয়েছিলেন কীভাবে ধর্ষণ কেবল একটি যৌন আকাঙ্ক্ষা নয়, বরং ক্ষমতার একটি প্রকাশ। বইটিতে যুদ্ধের সময়, কারাগারে এবং শিশুদের প্রতি ধর্ষণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। এই বই প্রকাশের পর নারীদের মধ্যে নিজেদের কথা বলার সাহস বেড়েছিল এবং ধর্ষণ বিষয়ক সংকট কেন্দ্র তৈরি করতে সহায়ক হয়েছিল।
একইসঙ্গে, বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
তবে, ব্রাউনমিলারের কিছু বক্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। বিশেষ করে, কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর এমmet Till-এর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাঁর কিছু মন্তব্য সমালোচিত হয়েছিল।
তিনি তাঁর একটি লেখায় তিলকে অভিযুক্ত করে বলেন, শ্বেতাঙ্গ নারীর প্রতি তিলের ‘অশালীন’ আচরণের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। এই ধরনের বক্তব্যে অনেকে ব্রাউনমিলারকে বর্ণবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে চিহ্নিত করেন।
ব্রাউনমিলারের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ‘ফেমিনিটি’ (Femininity), ‘সিয়িং ভিয়েতনাম’ (Seeing Vietnam) এবং ‘ওয়েভারলি প্লেস’ (Waverly Place)। তিনি ১৯৮০-এর দশকে নারীবাদী আন্দোলন থেকে কিছুটা দূরে সরে যান।
কিন্তু নারী অধিকারের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার ছিল অবিচল।
সুসান ব্রাউনমিলারের প্রয়াণ নারী অধিকার আন্দোলন এবং সাহিত্য জগতে একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর কাজ নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়ক হয়েছে এবং ভবিষ্যতে বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস