মুম্বাইয়ে বর্ষা মৌসুমের আগেই ভয়াবহ বন্যা, বিপর্যস্ত জনজীবন।
ভারতে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মে মাসের শুরু থেকেই এখানে অতিবৃষ্টি হচ্ছে, যা গত এক শতাব্দীর মধ্যে সর্বোচ্চ।
ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শহরটিতে এ মাসে এখন পর্যন্ত ৪০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অপ্রত্যাশিতভাবে বর্ষা আসায় শহরের নিচু এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।
বৃষ্টির কারণে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া ওয়ারলি মেট্রো স্টেশনও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, যাত্রীরা কোমর পর্যন্ত পানিতে হেঁটে যাচ্ছেন। স্টেশনের ছাদ থেকে পানি পড়ছে এবং প্ল্যাটফর্মগুলো জলমগ্ন হয়ে আছে।
ভারতের অর্থনীতি মূলত বর্ষা মৌসুমের ওপর নির্ভরশীল। বর্ষার বৃষ্টি কৃষকদের জন্য অপরিহার্য, যা দেশের খাদ্য উৎপাদন এবং সেচ ব্যবস্থার প্রধান উৎস।
ভারতের প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বেশি কৃষক এই বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। সাধারণত জুন মাস থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষা স্থায়ী হয়, যা শস্য উৎপাদন, জমির সেচ এবং জলাধার পূরণে সহায়ক।
তবে এবার বর্ষা মৌসুমের আগমনে মুম্বাইয়ের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে এবং অনেক গাড়িও পানির নিচে চলে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারতের বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন আসছে। আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞানী সুস্মা নায়ার জানিয়েছেন, ১৯১৮ সালের পর এবারই মে মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তার মতে, ২৬শে মে মুম্বাইয়ে বর্ষা শুরু হয়েছে, যা ১৯৫০ সালের পর দ্রুততম সময়ে বর্ষা আগমনের রেকর্ড।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে মুম্বাইয়ে চরম দুর্ভোগ দেখা যায়, বিশেষ করে গণপরিবহন ব্যবহারকারীদের জন্য। গত বছর মে মাসে ভারী বৃষ্টিতে একটি বিলবোর্ড ভেঙে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছিল এবং অনেকে আহত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি ওয়ারলি মেট্রো স্টেশনের উদ্বোধন করেছিলেন, যা ভারতের পুরনো পরিবহন ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের একটি অংশ।
আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, এই সপ্তাহেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করতে পারে। শুধু মুম্বাই নয়, দক্ষিণের রাজ্য কেরালাতেও বর্ষা মৌসুমের অপ্রত্যাশিত আগমন ঘটেছে, যা তীব্র গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি এনেছে।
এছাড়া, গত সপ্তাহে রাজধানী দিল্লিতেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার ফলে বিমানবন্দরের ছাউনি ধসে পড়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমন চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশের জন্যও এই ধরনের পরিস্থিতি একটি সতর্কবার্তা।
আমাদেরও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন