দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট (আসিয়ান), চীন এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি)-এর মধ্যে সম্প্রতি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে তিনটি পক্ষই ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচনের অঙ্গীকার করেছে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরীর লক্ষ্যে এই জোটবদ্ধতা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
সম্মেলনে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্য বৃদ্ধি। দেশগুলো পারস্পরিক বাণিজ্যের প্রসার এবং বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে একমত হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চীন-জিসিসি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করা এবং আসিয়ান-চীন মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের উন্নয়ন ঘটানো। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপগুলো সদস্য দেশগুলোর অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এই সম্মেলনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আসিয়ান, জিসিসি এবং চীনের সম্মিলিত জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রায় ২৪.৮৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্ব অর্থনীতির একটি বিশাল অংশ।
এই বিশাল অর্থনৈতিক শক্তি পারস্পরিক বাজারকে সুসংহত করতে, উদ্ভাবন বাড়াতে এবং আন্তঃআঞ্চলিক বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে।
তবে সম্মেলনে শুধু অর্থনৈতিক বিষয়ই আলোচনা হয়নি, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও স্থান পেয়েছে। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
মিয়ানমারে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সম্মেলন একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে, তেমনি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। এর মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন ও উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রভাব আরও বাড়বে।
আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে জিসিসি’র বাণিজ্য বাড়ছে দ্রুত গতিতে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সাল নাগাদ এই বাণিজ্য প্রায় ৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে।
বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রেও জিসিসি’র দেশগুলো আসিয়ানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মালয়েশিয়ার বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে জিসিসি’র বাণিজ্য ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখনো আসিয়ানের জন্য একটি বড় বাজার, তবে চীনের সঙ্গেও এই অঞ্চলের বাণিজ্য বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে আসিয়ান দেশগুলোর সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজারে পরিণত হয়েছে চীন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জোটবদ্ধতা বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি করতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা