জার্মানিতে একটি আদালতের রায়ে পেরুর এক কৃষকের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিপূরণের মামলা খারিজ হয়ে গেলেও, পরিবেশ দূষণের দায়ে দায়ী কোম্পানিগুলোর দায়বদ্ধতা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে।
পেরুর কৃষক সল লুসিয়ানো লিউইয়া জার্মানির জ্বালানি কোম্পানি আরডব্লিউই’র (RWE) বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, আরডব্লিউই’র কার্বন নিঃসরণের কারণে তার এলাকার হিমবাহ গলে যাচ্ছে, যা বন্যার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এবং তার জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে ফেলছে।
পশ্চিম জার্মানির হাম শহরের একটি আঞ্চলিক আদালত বুধবার এই মামলার রায় দেয়। আদালত লিউইয়ার ক্ষতিপূরণের আবেদন খারিজ করে দিলেও, দূষণকারী কোম্পানিগুলোকে তাদের নির্গত গ্যাসের কারণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিবেচনা করতে বলেছে।
রায়ে বলা হয়েছে, কোম্পানিগুলো যদি তাদের নির্গমন কমাতে কোনো পদক্ষেপ নিতে অস্বীকার করে, তবে তাদের ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী খরচ বহন করতে হতে পারে।
সল লিউইয়ার যুক্তি ছিল, আরডব্লিউই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কার্বন নিঃসরণকারী একটি কোম্পানি। শিল্প বিপ্লব থেকে শুরু করে, কোম্পানিটি বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের প্রায় শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশের জন্য দায়ী।
তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তার এলাকার বন্যা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তাদেরই দেওয়া উচিত। তার এলাকার একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের জন্য প্রায় ১৭,৫০০ মার্কিন ডলার প্রয়োজন ছিল, যা তিনি আরডব্লিউই’র কাছ থেকে দাবি করেছিলেন।
মামলার শুনানিতে লিউইয়া জানান, তিনি আরডব্লিউই’কে এজন্য দায়ী করেছেন কারণ এটি ইউরোপের বৃহত্তম দূষণকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। তিনি বলেন, তার পরিবারের সদস্যরা ভুট্টা, গম, বার্লি ও আলু চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাদের চাষাবাদের জমি প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
অন্যদিকে, আরডব্লিউই’র দাবি, কোনো একক কোম্পানির পক্ষে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী হওয়া সম্ভব নয়। কোম্পানিটি আরও জানায়, আদালতের মাধ্যমে জলবায়ু নীতি নির্ধারণের চেষ্টা করাটা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
আদালত লিউইয়ার ক্ষতির কোনো সরাসরি প্রমাণ পায়নি এবং তার সম্পত্তির ক্ষতির সম্ভবনা নেই বলে জানায়।
তারপরও, এই রায়টিকে জলবায়ু সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বসবাসকারী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ভবিষ্যতে অনুরূপ মামলা করার পথ খুলে দিতে পারে।
আদালতের বিচারক আরডব্লিউইকে তাদের কার্বন নিঃসরণের প্রভাব সম্পর্কে অবগত থাকার কথা বলেছিলেন। এই রায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা