মরুভূমির আগ্রাসনে বিলুপ্তির পথে মরক্কোর ঐতিহ্য, উদ্বিগ্ন বিশ্ব।
মরুভূমির রুক্ষতা আর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে আফ্রিকার দেশ মরক্কোর প্রাচীন জনপদ ওউয়ালাতা। এক সময়ের সমৃদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র, বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত এই জনপদটি আজ তার অতীতের গৌরব পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে ব্যস্ত।
সেখানকার হাতে লেখা প্রাচীন পুঁথিগুলো রক্ষার পাশাপাশি টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে ওউয়ালাতা।
সাহারা মরুভূমির প্রান্তসীমায় অবস্থিত ওউয়ালাতা একসময় ছিল বিভিন্ন জনপদের মধ্যে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানকার কাদা-মাটির তৈরি প্রাচীন বাড়িগুলো আজও স্থানীয় নারীদের আঁকা নকশা দিয়ে সজ্জিত।
এখানকার বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে রয়েছে শত শত বছরের পুরনো হাতে লেখা পুঁথি, যা তাদের সাংস্কৃতিক এবং সাহিত্যিক ঐতিহ্যের অমূল্য দলিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে ওউয়ালাতার বাসিন্দারা কাজের সন্ধানে শহরমুখী হওয়ায় জনপদটি ধীরে ধীরে তার জৌলুস হারাতে বসেছে।
বৃষ্টির অভাবে এখানকার পুরনো বাড়িগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেই সঙ্গে মরুভূমির বালু এসে ঢেকে দিচ্ছে জনপদটিকে। মরক্কোর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা জুড়ে মরুকরণ প্রক্রিয়া চলছে, যা এখানকার পরিবেশের জন্য এক বিরাট হুমকি।
১৯৮০-এর দশকে এখানকার মসজিদ পর্যন্ত বালু দিয়ে ঢেকে গিয়েছিল। বর্তমানে স্থানীয় ইমাম মোহাম্মদ বেন বাতির তত্ত্বাবধানে একটি গ্রন্থাগারে এইসব পুঁথিগুলো বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তাঁর পরিবার কোরআন বিষয়ক জ্ঞানচর্চার সঙ্গে জড়িত, এবং এই লাইব্রেরিতে ১৪ শতকের পুরনো পুঁথিও রয়েছে।
ঐতিহ্য রক্ষার এই কঠিন লড়াইয়ে স্থানীয়দের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। ১৯৯০-এর দশকে স্পেনের আর্থিক সহায়তায় এখানে একটি লাইব্রেরি তৈরি করা হয়, যেখানে দুই হাজারের বেশি বই সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বর্তমানে, বেন বাতির মতো কিছু নিবেদিতপ্রাণ মানুষের নিরলস প্রচেষ্টায় এই ঐতিহ্য রক্ষার চেষ্টা চলছে। পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা এবং বিদ্রোহের আশঙ্কার কারণে এখানে পর্যটকদের আনাগোনাও বেশ সীমিত।
ওউয়ালাতার এই সংকট বাংলাদেশের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণে আমাদেরও আরও সচেতন হতে হবে। ঐতিহাসিক স্থানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি যত্নবান হওয়া উভয় দেশের জন্যই জরুরি।
ওউয়ালাতাকে টিকিয়ে রাখতে এখানকার স্থানীয় সরকার এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। পুরনো বাড়িগুলো সংস্কার করা হচ্ছে এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ওউয়ালাতার এই সংগ্রাম বিশ্বজুড়ে ঐতিহ্যপ্রেমীদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা।