যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে আবারও ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে, যেখানে প্রধান সূচকগুলি উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করেছে। এই উত্থানের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করেছে, যার মধ্যে প্রধান হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়া এবং আমেরিকান ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি।
এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং বিনিয়োগের উপরও পরোক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে।
শেয়ার বাজারের চিত্র:
মঙ্গলবার, এস&পি ৫০০ সূচক ২ শতাংশ বেড়েছে, যা ছিল ৫,৯২১.৫৪ পয়েন্টে। ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ১.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪২,৩৪৩.৬৫ পয়েন্টে।
এছাড়া, নাসডাক কম্পোজিট ২.৫ শতাংশ বেড়ে ১৯,১৯৯.১৬ পয়েন্টে পৌঁছেছে। এই ঊর্ধ্বগতির ফলে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছে, কারণ এর আগে শুল্ক সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল।
কারণ ও প্রভাব:
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি প্রায়শই বাজারের গতিপথ পরিবর্তন করে। সম্প্রতি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) থেকে আসা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত জুলাই মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আগে এই শুল্ক ১লা জুন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এই ঘোষণার পর বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। একইসাথে, চীনের পণ্যের উপরও শুল্কের বিষয়ে কিছুটা নমনীয়তা দেখানোর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যা বাজারের জন্য ইতিবাচক।
ভোক্তা আস্থা ও বাজারের গতি:
মে মাসে, মার্কিন ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা বেড়েছে, যা গত ছয় মাসের মধ্যে প্রথম বৃদ্ধি। কনফারেন্স বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ভোক্তাদের আয়, ব্যবসা এবং চাকরির বাজার সম্পর্কে প্রত্যাশা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
এই ইতিবাচক মনোভাব বাজারের উন্নতিতে সহায়তা করেছে।
শেয়ার বাজারের অন্যান্য খবর:
কিছু নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ারেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেছে। এনভিডিয়া (Nvidia) -র শেয়ারের দাম ৩.২ শতাংশ বেড়েছে।
এছাড়া, সেলসফোর্স (Salesforce) একটি চুক্তির মাধ্যমে ইনফরম্যাটিকা (Informatica) -কে অধিগ্রহণ করার ঘোষণা দেওয়ায় ইনফরম্যাটিকার শেয়ারের দাম ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, অটোজোন (AutoZone)-এর মুনাফা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারায় এর শেয়ারের দাম ৩.৭ শতাংশ কমেছে।
বৈদেশিক বাজারের প্রভাব:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের এই উত্থান বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি প্রভাব ফেলছে। ইউরোপীয় বাজারের সূচকগুলিও সাধারণত ঊর্ধ্বমুখী ছিল, যদিও এশিয়ার বাজারগুলোতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
জাপানের বন্ড মার্কেটে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা গেছে।
বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য:
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের এই উত্থান বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং বিনিয়োগের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের ফলে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি হতে পারে।
তবে, বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা বাংলাদেশের বাজারেও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
উপসংহার:
মার্কিন শেয়ার বাজারে সাম্প্রতিক এই উন্নতি বাণিজ্য নীতি এবং ভোক্তাদের আস্থার একটি মিশ্র ফল। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি ইতিবাচক লক্ষণ হতে পারে।
তবে, বাজারের এই পরিবর্তনগুলি বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথের উপর নির্ভরশীল, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুযোগ এবং ঝুঁকি উভয়ই তৈরি করে। বিনিয়োগকারীদের বাজারের এই পরিবর্তনের দিকে নজর রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী তাদের বিনিয়োগ কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: