বিখ্যাত কেনীয় লেখক ও বিদ্রোহী, নগুয়ে ওয়া থিয়োঙ্গো, ৮৭ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। আফ্রিকার সাহিত্য জগতে তিনি রেখে গেছেন গভীর ছাপ। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই লেখকের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাহিত্যপ্রেমীদের মধ্যে। বুধবার তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এই দুঃখজনক সংবাদটি জানানো হয়।
নগুয়ে ওয়া থিয়োঙ্গো ১৯৩৮ সালে কেনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ছিল ১৯৫০-এর দশকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংঘটিত মাউ মাউ বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট তাঁর লেখায় গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল। তিনি শুধু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকেই নয়, কেনিয়ার স্বাধীনতা পরবর্তী সমাজের সমালোচনাও করেছেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে।
ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের আন্তঃসম্পর্ক নিয়েও তিনি কাজ করেছেন।
নগুয়ের সবচেয়ে বড় পরিচিতি আসে ১৯৭০-এর দশকে, যখন তিনি ইংরেজি ভাষার পরিবর্তে কিকুয়ু এবং সোয়াহিলি ভাষায় লিখতে শুরু করেন। সেই সময়ে এটি ছিল একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। অনেকেই এই পদক্ষেপকে সাহসী এবং একই সঙ্গে কিছুটা পাগলামি হিসেবেও দেখেছিলেন।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘ডিকলোনাইজিং দ্য মাইন্ড’ (Decolonising the Mind) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই বইটিতে তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, ঔপনিবেশিক শাসকদের ভাষা ব্যবহার করে মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়।
শুধু লেখক হিসেবেই নয়, নগুয়ে ছিলেন একজন ‘কনসায়েন্সের বন্দী’ও। ১৯৭৭ সালে তিনি কেনিয়ার কারাগারে বন্দী হন, কারণ তাঁর একটি নাটক তৎকালীন সমাজের সমালোচনা করেছিল।
তিনি একবার কেনিয়ার নতুন অভিজাত শ্রেণীকে ‘আশা, স্বপ্ন ও সৌন্দর্যের মৃত্যু’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ১৯৮২ সালে, নিজের দেশে নাট্যগোষ্ঠী ও পরিবেশনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর তিনি যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। সেখানেও তিনি কেনিয়া নিয়ে প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা ও উপন্যাস লেখা চালিয়ে যান।
নগুয়ের প্রয়াণে সাহিত্য ও রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ঢেউ লেগেছে। কেনিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা মারথা কারুয়া শোক প্রকাশ করে বলেন, “বিখ্যাত সাহিত্যিক ও পণ্ডিত, মাটির সন্তান এবং মহান দেশপ্রেমিক অধ্যাপক নগুয়ে ওয়া থিয়োঙ্গোর পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কেনিয়া শাখা এক্সে (X) লিখেছে, “শিক্ষক, আপনার বিপ্লবী লেখার জন্য ধন্যবাদ। কেনিয়ার ইতিহাসে আপনার স্থান এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছে, আপনি নশ্বরতা থেকে অমরত্বের দিকে যাত্রা করেছেন।
নগুয়ের প্রয়াণে তাঁর কাজের গভীরতা এবং সমাজের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার বিশেষভাবে স্মরণ করা হচ্ছে। তাঁর জীবন ও কর্ম, বিশেষ করে উত্তর-ঔপনিবেশিক সাহিত্যচর্চায়, গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাঁর সাহিত্যকর্ম বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদেরও নতুন করে ভাবিয়ে তুলবে, কারণ আমাদেরও রয়েছে ঔপনিবেশিক শাসনের তিক্ত অভিজ্ঞতা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা