ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপন আরও জোরদার করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার, দেশটির সরকার অধিকৃত এই অঞ্চলে নতুন করে ২২টি বসতি স্থাপন এবং এর মধ্যে কিছুকে বৈধতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। গ্যালান্ট একে “জুডিয়া ও সামারিয়ায়” ইসরায়েলের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, ইসরায়েলিরা পশ্চিম তীরের জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাও দুর্বল করা হবে, যা ইসরায়েলের জন্য হুমকিস্বরূপ।
অন্যদিকে, স্মোট্রিচ, যিনি নিজেও অবৈধভাবে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে বসবাস করেন এবং পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার পক্ষে, এই সিদ্ধান্তকে “ঐতিহাসিক” বলে অভিহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দল লিকুড পার্টি এক বিবৃতিতে এই পদক্ষেপকে “নতুন প্রজন্মের সিদ্ধান্ত” হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং জর্ডানের সঙ্গে ইসরায়েলের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তকে সুরক্ষিত করার জন্য এর কৌশলগত গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে।
ফিলিস্তিনিরা এই ভূখণ্ডকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখে, যার মধ্যে পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজাও অন্তর্ভুক্ত। ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করে এর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এটি একটি সম্ভাব্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ এই সিদ্ধান্তকে “বিপজ্জনক বৃদ্ধি” এবং “আন্তর্জাতিক বৈধতার প্রতি চ্যালেঞ্জ” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি ইসরায়েলকে এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য অভিযুক্ত করেছেন এবং সতর্ক করেছেন যে, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি এই ঘোষণার নিন্দা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “পশ্চিম তীরে ২২টি নতুন বসতি নির্মাণের ঘোষণা নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ।”
ইসরায়েলি এনজিও পিস নাউ বলেছে, এই পদক্ষেপ “পশ্চিম তীরের চিত্রনাট্য আমূল পরিবর্তন করবে এবং দখলদারিত্বকে আরও গভীর করবে।” তারা আরও বলেছে, “ইসরায়েল সরকার এখন আর কোনো রাখঢাক করছে না: অধিকৃত অঞ্চলগুলোর সংযোজন এবং বসতি স্থাপনই তাদের প্রধান লক্ষ্য।” আল জাজিরার প্রতিবেদক নিদা ইব্রাহিম পশ্চিম তীর থেকে জানিয়েছেন, “একটি সিদ্ধান্তে অনুমোদন করা অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়।”
উল্লেখ্য, ইসরায়েল ইতোমধ্যে পশ্চিম তীরে ১০০টিরও বেশি অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে, যেখানে প্রায় ৫ লাখ ইসরায়েলি বসবাস করে। এসব বসতি ছোট আকারের আউটপোস্ট থেকে শুরু করে আধুনিক অবকাঠামো সমৃদ্ধ বড় শহর পর্যন্ত বিস্তৃত।
এই ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ আগে, জাতিসংঘে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে একটি উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যার মূল উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের লক্ষ্যে দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত আলোচনা পুনরায় শুরু করা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা