যুদ্ধবিধ্বস্ত গ্রামগুলোতে ফিরছেন সিরীয়রা।
দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্মৃতি আজও সিরিয়ার প্রতিটি জনপদে। বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসানের পর, উদ্বাস্তুরা ধীরে ধীরে তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভিটেমাটিতে ফিরতে শুরু করেছেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৮ লক্ষ ৭০ হাজার সিরীয় শরণার্থী হয় বিদেশ থেকে, নয়তো দেশের অভ্যন্তরে স্থানান্তরিত হয়ে পুনরায় নিজ বসতিতে ফিরে এসেছেন।
তাদের ফিরে আসার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো অর্থনৈতিক সংকট এবং মৌলিক সুবিধার অভাব। ঘরবাড়ি পুনর্গঠন করার মতো সামর্থ্য অনেকেরই নেই।
সিরিয়ার হামা প্রদেশের আল-হাওয়াশ গ্রামের বাসিন্দা ৭৩ বছর বয়সী আরেফ শামতান তেমনই একজন। তিনি জানান, উদ্বাস্তু শিবির ছেড়ে আসার পর তিনি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ধ্বংসস্তূপের মাঝে একটি অস্থায়ী তাঁবু তৈরি করেছেন।
যদিও তার বাড়িটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত, তবুও তুরস্ক সীমান্তের শরণার্থী শিবিরের চেয়ে এটি অনেক ভালো। তার কথায়, ‘ধ্বংসস্তূপের মাঝে বসবাস করাও উদ্বাস্তু শিবিরে থাকার চেয়ে ভালো।’ তিনি আরও জানান, বর্তমানে তিনি তার জমিতে গম চাষ শুরু করেছেন।
আল-হাওয়াশ গ্রামটি একসময় বাশার আল-আসাদের অনুগতদের অধীনে ছিল। প্রতিবেশী প্রদেশ ইদলিবে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর শক্ত ঘাঁটি ছিল, যা এই অঞ্চলের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছিল।
শরণার্থী শিবিরগুলোতে জীবনযাত্রা ছিল খুবই কঠিন। কোনো সুযোগ সুবিধা ছিল না বললেই চলে। শামতানের ভাষায়, ‘আমরা এখানে, আমাদের গ্রামে থাকতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যতক্ষণ না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। আমরা বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের সাহায্য চেয়ে অপেক্ষা করছি।’
আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা ৭২ বছর বয়সী আব্দুল গাফুর আল-খতিবও তার পরিবারের সঙ্গে ২০১৯ সালে সীমান্ত এলাকার একটি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনিও চান দ্রুত তার নিজের গ্রামে ফিরতে।
তার ভাষায়, ‘আমি শুধু নিজের বাড়িতে ফিরতে চেয়েছিলাম। ফিরে এসে পুরনো একটি তাঁবু খাটিয়েছি, এতেই আমি খুশি।’ তিনি আরও জানান, সিরিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন।
তাই বাড়ি ফিরলেও সেখানে কোনো স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জল বা বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই।
২০১১ সালে বাশার আল-আসাদের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনের জেরে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এতে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়েছে এবং দেশটির অর্ধেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এদের মধ্যে অনেকেই প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এখনো ৬০ লক্ষের বেশি মানুষ দেশের ভেতরেই বাস্তুহারা জীবন যাপন করছেন। তাদের জীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা