জাতিসংঘের (UN) একটি নতুন প্রতিবেদনে জানা গেছে, উত্তর কোরিয়া গত এক বছরে রাশিয়াকে বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র, গোলা-বারুদ এবং সৈন্য। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে উভয় দেশের মধ্যে এই সহযোগিতা আন্তর্জাতিক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার সৈন্যদের পাশাপাশি ২০২৩ সাল থেকে প্রায় ৯ মিলিয়ন আর্টিলারি শেল এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে।
শুধু তাই নয়, তারা অন্তত ১০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে, যা ইউক্রেনের শহরগুলোতে বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে এবং কিয়েভ ও জাপোরিঝিয়ার মতো জনবহুল এলাকাগুলোতে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ব্যবহৃত হয়েছে।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণ দলের (Multilateral Sanctions Monitoring Team – MSMT) এই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে সামরিক প্রযুক্তি ও অন্যান্য মূল্যবান সরঞ্জাম সরবরাহ করছে।
এর মধ্যে রয়েছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধের সরঞ্জাম এবং পরিশোধিত তেল। বিনিময়ে, রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়াতে ডেটা সরবরাহ করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে এই ধরনের অবৈধ সহযোগিতা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন প্রস্তাবের লঙ্ঘন।
এর মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া একদিকে যেমন তাদের সামরিক কর্মসূচিকে অর্থ যোগাচ্ছে, তেমনি আধুনিক যুদ্ধ সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞতাও অর্জন করছে।
প্রতিবেদনটি তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো তথ্য দিয়েছে।
সেইসঙ্গে, যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ওপেন সোর্স সেন্টার (OSC) এবং কনফ্লিক্ট আর্মামেন্ট রিসার্চ (CAR) এর মত সংস্থাগুলিও তাদের গবেষণালব্ধ তথ্য সরবরাহ করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া উভয়েই জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করছে।
তারা এমন সব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে, যা নিষেধাজ্ঞাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও দেশ দুটির মধ্যে সামরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
এমএসএমটি’র সদস্য দেশগুলো উত্তর কোরিয়ার প্রতি কূটনৈতিক আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে এর অনেক গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধে সহায়তার বিনিময়ে রাশিয়া সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে অত্যাধুনিক মহাকাশ ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ভাগ করে নিতে পারে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও স্বীকার করেছেন, গত বছর ইউক্রেনের কুর্স্ক অঞ্চলে রুশ ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের জন্য উত্তর কোরিয়ার সেনারা লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, অস্ত্র সরবরাহ এবং সামরিক সহযোগিতার এই ধারা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।
কারণ, এর ফলে একদিকে যেমন ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি জাতিসংঘের বিধিনিষেধের কার্যকারিতাও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন