একটি কুকুরের বন্য পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার একটি দ্বীপে হারিয়ে যাওয়া ভ্যালেরি নামের একটি ছোট আকারের ড্যাক্সহাউন্ড কুকুরের ফিরে আসার ঘটনা এই আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
৫২৯ দিন পর, সুস্থ অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায় তাকে। এই ঘটনা পশুপ্রেমীদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করেছে—কুকুর কি মানুষের সাহায্য ছাড়াই বাঁচতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর উত্তর আসলে বেশ জটিল। কারো কারো মতে, মানুষের থেকে দূরে, বন্য পরিবেশে কিছু কুকুর ভালোভাবেই টিকে থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ক্যানাইন কগনিশন ল্যাবের পরিচালক এবং ‘জিনিয়াস অফ ডগস’ বইয়ের লেখিকা ভ্যানেসা উডস মনে করেন, কিছু কুকুর পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলেও, অনেকেই পারবে না। আবার, প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা জেসিকা পিয়ার্স-এর মতে, কুকুর প্রজাতি হিসেবে মানুষের সাহায্য ছাড়াই ভালোভাবেই বাঁচতে পারে।
ভ্যালেরির উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, কুকুর একা বাঁচতে পারলেও কিছু বিশেষ গুণের অধিকারী হতে হয়। শিকার করার প্রবণতা, বুদ্ধি এবং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এক্ষেত্রে জরুরি।
অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গলে ভ্যালেরি হয়তো ভাগ্যবান ছিল, কারণ সেখানে তার জন্য তেমন কোনো বড় শিকারি ছিল না। তবে বিষাক্ত সাপ থেকে নিজেকে বাঁচানোটাও একটা চ্যালেঞ্জ ছিল।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কুকুরের পক্ষে বন্য পরিবেশে ভালোভাবে টিকে থাকা কঠিন। অতিরিক্ত শারীরিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কুকুর, যেমন ছোট পা বা বড় শরীরের কুকুরদের দৌড়াতে সমস্যা হতে পারে।
ফলে তারা শিকার করতে বা বিপদ থেকে পালাতে সমস্যা অনুভব করতে পারে। অন্যদিকে, ছোট আকারের কুকুর, যেমন ভ্যালেরি, কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে পারে।
তারা শিকারীর চোখে সহজে পড়ে না এবং কম খাবার খেয়েও বাঁচতে পারে।
কুকুরের টিকে থাকার ক্ষেত্রে তাদের স্বভাবও গুরুত্বপূর্ণ। তারা সাধারণত সবকিছু খায় এবং সহজে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে।
তবে ভ্যালেরির ক্ষেত্রে, তার আত্মবিশ্বাসই হয়তো সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ২০ কোটি রাস্তার কুকুর রয়েছে। তারা মানুষের থেকে স্বাধীনভাবে বাঁচে।
তবে, তাদের জীবন সহজ নয়। বিশেষ করে অল্পবয়সী কুকুরের ক্ষেত্রে, বেশি দিন বাঁচার সম্ভাবনা কম থাকে। ভারতের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৮১ শতাংশ কুকুর প্রজনন বয়স পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই মারা যায়।
কুকুরেরা একা বাঁচতে পারলেও, মানুষের সঙ্গ তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা সম্ভবত একাকীত্ব অনুভব করতে পারে।
জেসিকা পিয়ার্স মনে করেন, মানুষের সঙ্গ না পেলে তাদের সামাজিক চাহিদা অপূর্ণ থাকে।
ভ্যালেরির ঘটনাটি এই দ্বিধা ভালোভাবেই তুলে ধরে। বন্য পরিবেশে প্রায় দেড় বছর কাটানোর পর, যখন সে তার পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়, তখন তাদের দেখে সে দারুণ খুশি হয়েছিল।
তাদের কাছে ছুটে গিয়ে আদর করা, খেলা করা—এসবই ছিল ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
সবশেষে বলা যায়, কুকুর প্রজাতি হিসেবে হয়তো মানুষের সাহায্য ছাড়াই বাঁচতে পারবে, তবে মানুষের সঙ্গ তাদের জন্য খুব জরুরি।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক