বাংলার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে একটি নতুন বিতর্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ধূসর নেকড়ে ‘আশা’
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ধারণাটি শুধু একটি অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়, কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় সংরক্ষণের এই প্রক্রিয়া বিতর্কের জন্ম দেয়।
এমনই একটি বিতর্ক বর্তমানে আলোচনার বিষয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ধূসর নেকড়ে, ‘আশা’-কে কেন্দ্র করে পরিবেশবিদ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
আশার গল্পটি শুরু হয় অ্যারিজোনার বন্য পরিবেশ থেকে। সে মেক্সিকান ধূসর নেকড়ে প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত, যারা একসময় প্রায় বিলুপ্তির পথে ছিল।
আশার স্বভাব হলো, সে নির্দিষ্ট অঞ্চলের সীমানা ভেঙে প্রায়ই অন্য অঞ্চলে চলে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস’ (FWS) নামক সরকারি সংস্থা এই কারণে তাকে নিউ মেক্সিকোর একটি সংরক্ষিত স্থানে বন্দী করে রেখেছে।
তাদের যুক্তি, আশাকে মুক্ত করলে তার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। এছাড়া, তারা চায় সে প্রজনন করুক, যাতে এই বিরল প্রজাতির বংশবৃদ্ধি হয়।
অন্যদিকে, পরিবেশবিদদের মতে, আশাকে বন্দী করে রাখা তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করে। তাদের দাবি, বন্যপ্রাণীদের নিজেদের আবাসস্থল বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।
মিশেল লুটে নামের একজন নেকড়ে বিশেষজ্ঞ বলেন, “আশা আমাদের দেখাচ্ছে, সুযোগ পেলে অনেক নেকড়ে কী করতে চায়।
আশার এই আচরণ একদিকে যেমন তার স্বাধীনতা এবং প্রকৃতির অধিকারের প্রশ্ন তোলে, তেমনই আবার প্রজাতির বিলুপ্তি রোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও জড়িত।
FWS চায়, আশার মাধ্যমে তারা এই প্রজাতির জিনগত বৈচিত্র্য বাড়াতে সক্ষম হোক। এর জন্য তারা তাকে বন্দী করে প্রজননের ব্যবস্থা করেছে।
সম্প্রতি, জানা গেছে, বন্দী অবস্থায় আশার প্রজনন হয়েছে এবং সে কয়েকটি শাবকের জন্ম দিয়েছে।
আশার এই ঘটনা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং মানুষের মধ্যেকার সম্পর্ককে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। একদিকে, মানুষের তৈরি করা সীমানা, যা হয়তো বন্যপ্রাণীর কাছে কোনো অর্থ রাখে না, অন্যদিকে, তাদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা।
এই দ্বিধা থেকেই জন্ম নেয় বিতর্ক।
আশার মতো নেকড়ের জীবনযাত্রা এবং তাদের সংরক্ষণের বিষয়টি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশেও বাঘ, কুমির এবং ডলফিনসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।
তাদের সংরক্ষণে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে, এই ধরনের সংরক্ষণে প্রায়ই কিছু চ্যালেঞ্জ আসে, যেমন আবাসস্থলের অভাব, চোরা শিকার এবং মানুষের সঙ্গে সংঘাত।
আশার বিষয়টি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে একদিকে যেমন প্রজাতি বাঁচানোর চেষ্টা করতে হয়, তেমনই তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হয়।
আশার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো অজানা। তবে, তার গল্পটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যা বিশ্বজুড়ে আলোচনা তৈরি করেছে।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক