শুক্রবার ১৩ তারিখ: কেন কিছু মানুষ এটিকে অশুভ মনে করে?
জীবনে এমন কিছু দিন আছে যা আমাদের মনে এক ধরনের অজানা ভীতি তৈরি করে। পশ্চিমা সংস্কৃতিতে, এই রকম একটি দিন হলো শুক্রবার ১৩ তারিখ। এই দিনে অনেকেই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা থেকে বিরত থাকেন, এমনকি ঘর থেকে বের হতেও দ্বিধা বোধ করেন। কিন্তু কেন এই তারিখটি এত উদ্বেগের কারণ হয়? এর পেছনে কি কোনো যুক্তি আছে, নাকি এটি নিছকই একটি কুসংস্কার?
আসলে, শুক্রবার ১৩ তারিখের ভয়ের মূল কারণ হলো মানুষের মনে থাকা কিছু গভীর বিশ্বাস। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মনোবিজ্ঞানী, জেন রাইসেনের মতে, কুসংস্কারগুলো আমাদের অজান্তেই আমাদের আচরণকে প্রভাবিত করে। তিনি দেখিয়েছেন যে, যারা কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন না, তারাও কোনো খারাপ ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি মনে করেন, যদি তারা মনে করেন যে তাদের ওপর কোনো অশুভ প্রভাব পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো দুর্ঘটনার শিকার না হওয়ার কথা বললে, তাদের মনে হতে পারে যে এটি ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।
এই ধরনের চিন্তা শুক্রবার ১৩ তারিখে আরও বেশি দেখা যায়। “যদিও আমি সক্রিয়ভাবে বিশ্বাস করি না, তবে শুক্রবার ১৩ তারিখ একটি পরিচিত সাংস্কৃতিক উপাদান হিসাবে বিদ্যমান থাকার কারণে, আমি এটিকে একটি সম্ভাবনা হিসাবে বিবেচনা করি,” বলেছেন রাইসেন। এই দিনে কোনো সাধারণ ঘটনা ঘটলে, আমরা সেটিকে বিশেষভাবে খেয়াল করি এবং এর সঙ্গে খারাপ কিছু ঘটার সম্ভাবনাকে যুক্ত করি।
কিন্তু এই ভীতি কি সত্যিই কোনো ভিত্তি আছে? মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, শুক্রবার ১৩ তারিখে দুর্ঘটনার হার বা অস্ত্রোপচারের ফলাফলের কোনো তারতম্য হয় না। এমনকি শেয়ার বাজারেও এই দিনে বিশেষ কোনো খারাপ প্রভাব দেখা যায় না।
তাহলে এই ভয়ের উৎস কোথায়? এর উত্তর খুঁজতে গেলে, আমাদের ফিরে যেতে হবে ইতিহাসের পাতায়। অনেকের মতে, এই দিনের সঙ্গে ১৩ সংখ্যাটির একটি সম্পর্ক রয়েছে। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, যিশুর সঙ্গে তাঁর ১২ জন শিষ্য ছিলেন এবং ১৩ জন ব্যক্তি নিয়ে রাতের খাবার খাওয়ার ধারণাটি এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যিশুকে শুক্রবারেই ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, যা সেই দিনের অশুভত্বের ধারণাটিকে আরও শক্তিশালী করে।
আবার, কেউ কেউ মনে করেন, এই ভয়ের বীজ নিহিত রয়েছে প্রাচীন সংস্কৃতিতে। গ্রীক পুরাণে, ১৩ সংখ্যাটিকে অশুভ মনে করা হতো, কারণ তারা বিশ্বাস করত, অলিম্পাসের ১২ জন দেবতা ছিলেন। ১৩ সংখ্যাটি যেন তাদের সম্পূর্ণতার বাইরে, যা কিছু অশুভের প্রতীক।
তবে, শুধু পশ্চিমা সংস্কৃতিতেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত আছে। আমাদের দেশেও শুভ-অশুভ দিন, ক্ষণ, সংখ্যা ইত্যাদি নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের ধারণা প্রচলিত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো শুভ কাজের আগে মিষ্টিমুখ করা বা যাত্রা শুরুর আগে দই খাওয়া—এগুলো আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কুসংস্কারগুলো হয়তো আমাদের যুক্তিবুদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, কিন্তু এগুলো আমাদের জীবনের একটি অংশ। এগুলো আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং বিশ্বাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। যদিও বিজ্ঞান আমাদের যুক্তি দিয়ে সবকিছু বিচার করতে শেখায়, তারপরও অনেক সময় আমরা নিজেদের অজান্তেই কিছু কুসংস্কারকে মেনে চলি।
সুতরাং, শুক্রবার ১৩ তারিখ হোক বা অন্য কোনো দিন, কুসংস্কারের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে হলে প্রয়োজন সচেতনতা এবং যুক্তিবোধের প্রয়োগ। আমাদের মনে রাখতে হবে, ভয় নয়, বরং আত্মবিশ্বাস এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনা আমাদের জীবনে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক