বিশ্বজুড়ে গ্রীষ্মের উৎসব: সংস্কৃতি আর আনন্দের এক ভিন্ন জগৎ।
গ্রীষ্মকাল মানেই যেন উৎসবের মরসুম। এই সময়টাতে বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের উৎসবের আয়োজন করা হয়, যা সেখানকার সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।
কোনোটা প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের উদযাপন, আবার কোনোটা লোককথার অনবদ্য প্রকাশ। আসুন, গ্রীষ্মের কয়েকটি মনোমুগ্ধকর উৎসবের সঙ্গে পরিচিত হই, যা একইসঙ্গে আকর্ষণীয় এবং শিক্ষণীয়।
প্রথমেই আসা যাক সুইডেনের লেকসান্ড-এ পালিত ‘মিডসমার’ উৎসবের কথায়।
২১শে জুনের কাছাকাছি সময়ে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যা গ্রীষ্মের সূর্যের দীর্ঘতম দিনের উদযাপন।
স্থানীয়রা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে, ফুলের মুকুট পরে শহরের চার্চ থেকে ‘সাম্মিলসডাল’ নামক প্রাকৃতিক অ্যাম্ফিথিয়েটারে একত্রিত হন। সেখানে তারা ফুল ও পাতায় সজ্জিত একটি ‘মেপোল’-এর চারপাশে নাচেন এবং গান করেন।
চলে পিকল করা হেরিং ও স্ট্রবেরি খাওয়ার পালা, সেই সঙ্গে স্থানীয় পানীয় ‘আক্যাভিট’-এর স্বাদ নেওয়া হয়।
এর পরেই আছে ইংল্যান্ডের গ্লাস্টনবারি উৎসব।
এটি নিছক একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের এক গভীর উদযাপন।
গ্রীষ্মের শুরুতে, বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় সময়ে, এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
এখানে সঙ্গীত, নৃত্য, প্রকৃতির কাছাকাছি আসা এবং উৎসবের উন্মাদনা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
উৎসবের স্থানটি গ্লাস্টনবারি টরের কাছাকাছি হওয়ায় কিং আর্থারের কিংবদন্তীর একটি ছোঁয়াও এতে যোগ হয়।
ওমানের ধোফার অঞ্চলে অনুষ্ঠিত ‘খারিফ’ উৎসবটি বর্ষাকালের উদযাপন।
২১শে জুন থেকে ২০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই সময়ে আরব উপদ্বীপের এই অঞ্চলে বর্ষা নামে, যা মরুভূমিকে সবুজে পরিণত করে।
ওমানের মানুষজন উত্তাপ থেকে বাঁচতে এখানে এসে ভিড় করে, উপভোগ করে হালকা বৃষ্টি, সবুজ প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আর সুগন্ধি ধূপের ঘ্রাণ।
এই উৎসবে সঙ্গীত ও নৃত্যের অনুষ্ঠান হয়, স্থানীয় হস্তশিল্প ও খাবারের পসরা বসে, আর আকাশে ওড়ে গরম হাওয়ার বেলুন।
মাল্টার বুসকেট গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত ‘ফেস্টা অফ মনারজা’ উৎসবটি ২৯শে জুন পালিত হয়।
এটি সেই দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যেখানে মধ্যযুগীয় পোশাক পরে স্থানীয়রা একত্রিত হন।
ফল ও সবজির কারুকার্য প্রদর্শন করা হয়, বাদ্যকররা মাল্টিজ লোকসংগীত পরিবেশন করেন, আর থাকে ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন, যার মধ্যে খরগোশের মাংসের স্টু অন্যতম।
জাপানের উশিৎসু-তে অনুষ্ঠিত ‘আবারে’ উৎসবটি একটু ভিন্ন ধরনের।
৪-৫ই জুলাই এই উৎসবে চলে উন্মাদনা আর ধ্বংসের খেলা।
পুরাণ ও লোককথার চিত্র দিয়ে সজ্জিত বিশাল আকারের বাতি তৈরি করা হয়, যা উৎসবের সময় মাতাল অবস্থায় থাকা পুরুষরা ভেঙে ফেলে।
এই উৎসবটি আসলে ১৭ শতকে রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে শুরু হয়েছিল।
উৎসবের আগে, মাঝে ও পরে প্রচুর পরিমাণে ‘সাকে’ পান করা হয়।
অবশেষে আসা যাক থাইল্যান্ডের ‘ফুকেত ভেজিটেরিয়ান’ উৎসবের কথায়।
এই উৎসবে নিরামিষ খাবারের উদযাপন করা হয়, তবে এর সঙ্গে যুক্ত আছে কিছু কঠোর আচার-অনুষ্ঠান।
এই উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা তাদের শরীরে বিভিন্ন ধারালো বস্তু বিদ্ধ করে, যা দর্শকদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে।
গ্রীষ্মের এই উৎসবগুলো কেবল আনন্দ উপভোগের উপলক্ষ্যই নয়, বরং বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি আমাদের আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করে।
প্রতিটি উৎসব তার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।
তাই, উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি ভিন্ন জগৎ এর সঙ্গে পরিচিত হতে পারি, যা আমাদের মনকে আরও প্রসারিত করে তোলে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক