মহাকাশ বিজ্ঞানে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, ভেরা রুবিন: অচেনা ‘ডার্ক ম্যাটার’-এর অনুসন্ধানী
মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে বিজ্ঞানীদের নিরন্তর পথচলা অব্যাহত। এই অনুসন্ধানের পথে এক উল্লেখযোগ্য নাম ভেরা রুবিন।
তিনি শুধু একজন বিজ্ঞানী ছিলেন না, ছিলেন এক অনুপ্রেরণা। তাঁর আবিষ্কারগুলি মহাকাশ বিজ্ঞানকে নতুন দিগন্ত দেখিয়েছে, বিশেষ করে ‘ডার্ক ম্যাটার’ বা অদৃশ্য বস্তুর ধারণা প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
১৯৬০-এর দশকে, অ্যারিজোনার কিট পিক ন্যাশনাল অবজারভেটরিতে রাতের আকাশে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির দিকে তাকিয়ে ভেরা রুবিন এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন। তাঁর সহযোগী ছিলেন কেন্ট ফোর্ড।
তাঁরা গ্যালাক্সির ঘূর্ণন গতি নিরীক্ষণ করছিলেন। সেই সময়ে প্রচলিত ধারণা ছিল, সূর্যের চারদিকে গ্রহদের মতো, গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা নক্ষত্রগুলি দ্রুত এবং বাইরের দিকের নক্ষত্রগুলি ধীরে ঘোরে।
কিন্তু রুবিন তাঁর পর্যবেক্ষণে ভিন্ন চিত্র দেখতে পান। তিনি দেখলেন, গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে দূরের নক্ষত্রগুলিও প্রায় একই গতিতে ঘুরছে।
এই পর্যবেক্ষণ প্রমাণ করে, গ্যালাক্সির ঘূর্ণন গতির এই অসামঞ্জস্যের কারণ হলো ‘ডার্ক ম্যাটার’-এর উপস্থিতি।
ডার্ক ম্যাটার হলো এক রহস্যময় অচেনা উপাদান, যা আলো শোষণ করে না বা নির্গতও করে না। এই কারণে একে সরাসরি দেখা যায় না।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মহাবিশ্বের বিশাল ভরের একটি বড় অংশ এই ডার্ক ম্যাটার দ্বারা গঠিত, যা গ্যালাক্সিকে একত্র রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি যেন এক অদৃশ্য ‘সুতোর জাল’, যা গ্যালাক্সিকে ধরে রেখেছে।
ভেরা রুবিনের এই আবিষ্কার শুধু বিজ্ঞান জগতে আলোড়ন তোলেনি, নারীদের বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহিত করেছে। সে সময়ে বিজ্ঞান ছিল পুরুষশাসিত।
সেখানে তিনি নারী বিজ্ঞানীদের জন্য পথ খুলেছেন, তাঁদের এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। তিনি সবসময় বিজ্ঞানীদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন এবং তাঁর এই আদর্শ তরুণ বিজ্ঞানীদের কাছে আজও অনুকরণীয়।
ভেরা রুবিনের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁর নামে একটি মানমন্দির তৈরি করা হয়েছে, যার নাম ‘ভেরা রুবিন অবজারভেটরি’। এই মানমন্দিরটি মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দিতে সাহায্য করবে।
এই মানমন্দিরটি সম্ভবত ২০২৫ সাল থেকে ছবি পাঠানো শুরু করবে।
ভেরা রুবিনের জীবন আমাদের শিখিয়ে যায়, কৌতূহল, অধ্যবসায় এবং মানবিকতাই সাফল্যের চাবিকাঠি। তাঁর কাজ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জানার কোনও শেষ নেই, আর বিজ্ঞানচর্চার পথ সবসময় উন্মুক্ত।
তাঁর আবিষ্কারগুলি প্রমাণ করে, বিজ্ঞান শুধু তত্ত্বের জগৎ নয়, এটি আমাদের চারপাশের জগৎকে নতুন করে দেখার এক অবিরাম প্রক্রিয়া।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক