গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণের কেন্দ্রে ইসরায়েল-সমর্থিত যোদ্ধাদের ওপর হামাস, নিহত ১২।
গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে যুক্ত একটি ইসরায়েল-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর অন্তত ১২ জন সদস্যকে হত্যার দাবি করেছে হামাস। বৃহস্পতিবার ভোরে এই ঘটনা ঘটে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে, গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের একটি সাহায্য সংস্থা জানায়, হামাস তাদের কর্মী বহনকারী একটি বাসে হামলা চালিয়েছে, যাতে তাদের আটজন কর্মী নিহত হয়েছেন।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা যায়, হামাস-নিয়ন্ত্রিত পুলিশ বাহিনীর একটি ইউনিট, যারা ‘সাহাম’ নামে পরিচিত, তারা এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। তাদের দাবি, নিহত ব্যক্তিরা ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা করত। তবে, হামাসের এই দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, ইয়াসির আবু শবাবের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী, যাদের ‘পপুলার ফোর্সেস’ বলা হয়, তারাও হামাসের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনেছে। তারা জানায়, হামাস তাদের যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করেছে। একইসঙ্গে তারা সাহায্য কর্মীদের হত্যার জন্য হামাসকে দায়ী করে।
ঘটনার পরে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা মানবিক ফাউন্ডেশনের বিবৃতি তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে। তবে, ঘটনার বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এই ঘটনার মধ্যেই, গাজার কেন্দ্রস্থলে জিএইচএফ-এর খাদ্য বিতরণের একটি স্থানের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১৩ জন নিহত এবং ১৭০ জন আহত হয়েছে। আহতদের আল-আওদা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ঐ স্থানে জড়ো হওয়া লোকজনের উদ্দেশ্যে সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছিল।
এদিকে, গাজাজুড়ে ইন্টারনেট এবং টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। স্থানীয় টেলিযোগাযোগ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘প্যালটেল’ এবং ফিলিস্তিনি টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি অভিযানের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামতের জন্য কর্মীদের ঐ এলাকায় যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণের বিষয়টি ইতোমধ্যে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। গত মাস থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে প্রায় প্রতিদিনই গুলির ঘটনা ঘটছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে দায়ী করেছেন। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েলি বাহিনী সন্দেহজনক আচরণের অজুহাতে প্রায়ই গুলি চালাচ্ছে।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য প্রধান সাহায্য সংস্থাগুলো ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, গাজায় মানবিক সহায়তাকে সামরিকীকরণ করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের অবরোধ এবং সামরিক অভিযানের কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েল স্বীকার করেছে, তারা হামাসকে প্রতিহত করার জন্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে। আবু শবাবের মিলিশিয়া গোষ্ঠী, যারা নিজেদের ‘পপুলার ফোর্সেস’ বলে পরিচয় দেয়, তারা গাজার দক্ষিণে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক স্থাপিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে। সাহায্য কর্মীরা বলছেন, এই গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রায়ই জাতিসংঘের ত্রাণ বোঝাই ট্রাক লুট করে থাকে।
গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন অবশ্য আবু শবাব গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
গাজা উপত্যকায় চলমান এই সহিংসতা ও মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, খাদ্য, জ্বালানি ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।