যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যাপটিস্ট সম্প্রদায়ের বার্ষিক সম্মেলনে নারী যাজক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিতর্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী খ্রিস্টান সম্প্রদায় সাউদার্ন ব্যাপটিস্ট কনভেনশন (SBC) -এর বার্ষিক সম্মেলনে নারী যাজকদের ভূমিকা এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছে। গত বুধবার টেক্সাসের ডালাসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এই বিতর্ক হয়।
এই সম্মেলনে মূলত দুটি প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়।
প্রথম প্রস্তাবে ছিল, এসবিসির পাবলিক পলিসি বিষয়ক সংস্থা ‘এথিক্স অ্যান্ড রিলিজিয়াস লিবার্টি কমিশন’ (ERLC)-কে বিলুপ্ত করার আবেদন। এই কমিশনের বিরুদ্ধে অভিবাসন নীতি সহ বিভিন্ন বিষয়ে উদারপন্থী অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
প্রস্তাব উত্থাপনকারীরা মনে করেন, সংস্থাটি তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী রক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটি পরাজিত হয়, যেখানে ৩,৭৪৪ জন সদস্য ইআরএলসি’র পক্ষে এবং ২,৮১৯ জন সদস্যের বিলুপ্তির পক্ষে ভোট দেন।
এর মাধ্যমে এসবিসি’র নীতি নির্ধারণে ইআরএলসি’র প্রভাব বহাল রইল।
দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল, এসবিসি’র সংবিধানে নারী যাজকদের নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একটি ধারা যুক্ত করা। এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়লেও তা প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ৩,৪২১ জন এবং বিপক্ষে ভোট দেন ২,১৯১ জন। উল্লেখ্য, ব্যাপটিস্ট সম্প্রদায়ের ‘বাপটিস্ট ফেইথ অ্যান্ড মেসেজ’ অনুযায়ী, যাজকের পদ শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য সংরক্ষিত।
এই প্রস্তাবগুলো মূলত এসবিসির মধ্যে রক্ষণশীলতার মাত্রা কতটুকু হবে, সেই সংক্রান্ত বিতর্কেরই প্রতিফলন। সম্মেলনকারীরা সম্প্রতি একই লিঙ্গের মানুষের মধ্যে বিবাহকে বৈধতা দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান জানান।
এছাড়াও, নারী যাজকদের বিষয়টি নিয়েও তাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইআরএলসি’র কার্যক্রম বহাল থাকার অর্থ হল, দেশের বৃহত্তম ইভাঞ্জেলিক্যাল সংস্থা হিসেবে তারা জনস্বার্থ বিষয়ক নীতি নির্ধারণে তাদের মতামত আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারবে। ইআরএলসি’র বর্তমান প্রেসিডেন্ট ব্রেন্ট লেদারউড এই সংস্থার পক্ষে বক্তব্য রাখেন।
তিনি জানান, ইআরএলসি গর্ভপাত এবং রূপান্তরকামীদের অধিকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, তারা ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানানো সহ বিভিন্ন রক্ষণশীল নীতি সমর্থন করে থাকে।
অন্যদিকে, ইআরএলসি’র সমালোচকরা বলছেন, এই সংস্থা গর্ভপাতের শিকার নারীদের জন্য কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরোধিতা করে থাকে। তাদের মতে, এর ফলে গর্ভপাতের বিষয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের বিতর্কগুলো মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় অঙ্গনে চলমান বিভিন্ন বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। বিশেষ করে, নারী অধিকার, এলজিবিটি অধিকার এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রশ্নে ব্যাপটিস্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ দেখা যায়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস