মহা বীর আলেকজান্ডারের জন্ম: পিতার সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা
প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। তাঁর দিগ্বিজয়ী যাত্রা আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের মনে বিস্ময় জাগায়।
তবে এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে ছিল এক গভীর পারিবারিক কাহিনি, যা তাঁর জীবন এবং ভবিষ্যৎকে নতুন রূপ দিয়েছিল। আলেকজান্ডারের পিতা ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ। তাঁদের সম্পর্কের উত্থান-পতন, টানাপোড়েন এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আলেকজান্ডারের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
আলেকজান্ডারের জন্ম হয় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে, যখন মেসিডোনিয়া ছিল এক শক্তিশালী রাজ্য। ফিলিপ ছিলেন একজন বিচক্ষণ শাসক, যিনি রাজ্যকে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে সুসংহত করেছিলেন।
তবে তাঁর বহুবিবাহের রীতি রাজপরিবারে সৃষ্টি করেছিল গভীর অস্থিরতা। রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং উত্তরাধিকার নিশ্চিত করার জন্য তিনি একাধিক বিবাহ করেছিলেন। এই বহুগামিতা রাজপরিবারে ক্ষমতা দখলের লড়াইকে আরও তীব্র করে তোলে।
ফিলিপের সাতজন স্ত্রীর মধ্যে আলেকজান্ডারের মা ছিলেন অলিম্পিয়াস, যিনি ছিলেন এপিরুসের রাজকুমারী।
সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে মেসিডোনিয়ার রাজদরবারে ছিল এক জটিল নিয়ম। কে রাজা হবেন, তা নির্ভর করত কয়েকটি বিষয়ের ওপর।
আলেকজান্ডারের সৎ ভাই তৃতীয় অ্যারাইডিয়াসের মানসিক দুর্বলতা ছিল। অনেকের ধারণা, সিংহাসনের দাবিদার হওয়ার পথে বাধা দূর করতে অলিম্পিয়াস তাঁকে বিষ প্রয়োগ করেছিলেন।
আলেকজান্ডারের শিক্ষক ছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটল। পিতার তত্ত্বাবধানে তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন।
আলেকজান্ডারের রাজনৈতিক জীবনের শুরুটা বেশ উজ্জ্বল ছিল। তিনি অল্প বয়সেই পিতার অনুপস্থিতিতে রাজ্যের শাসনভার দক্ষতার সঙ্গে সামলেছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রেও তাঁর সাহস ও রণকৌশলের পরিচয় পাওয়া যায়।
এমনকি, পিতার নির্দেশে তিনি গ্রিক শহর এথেন্সে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন।
তবে পিতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সব সময় মসৃণ ছিল না। ফিলিপ যখন তরুণী ক্লিওপেট্রাকে বিবাহ করেন, তখন আলেকজান্ডারের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
ক্লিওপেট্রা ছিলেন মেসিডোনীয় অভিজাত বংশের কন্যা, যা আলেকজান্ডারের উত্তরাধিকারের পথে নতুন সংকট তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল। এই ঘটনা তাঁদের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি করে।
এর কিছু দিন পরেই, আলেকজান্ডার ও তাঁর মা অলিম্পিয়াসকে নির্বাসনে যেতে হয়। এরপর ঘটে ‘পিক্সোডারাস’ নামক এক ঘটনা।
ফিলিপ পারস্যের এক শাসকের কন্যার সঙ্গে তাঁর পুত্র অ্যারাইডিয়াসের বিবাহের ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আলেকজান্ডার এতে বাধা দেন। এই ঘটনা পিতাপুত্রের মধ্যে গভীর সন্দেহ ও অবিশ্বাসের জন্ম দেয়।
অবশেষে, এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা তাঁদের সম্পর্কের চূড়ান্ত পরিণতি ঘটায়। ফিলিপের কন্যা ক্লিয়োপেট্রার বিবাহ অনুষ্ঠানে তাঁর দেহরক্ষী পাউসানিয়াস তাঁকে হত্যা করে। এই ঘটনার পর আলেকজান্ডার মেসিডোনিয়ার রাজা হন।
আলেকজান্ডারের শাসনকালে তিনি বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তাঁর এই সাফল্যের পেছনে পিতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের গভীর প্রভাব ছিল। তাঁদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব, প্রতিযোগিতা, এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া আলেকজান্ডারের চরিত্রকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক