টাইর্যানোসরাস রেক্স (T. rex) – এক সময়ের মাংসাশী ডাইনোসরদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। বিশাল এই প্রাণীটির জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা আজও চলে।
সম্প্রতি মঙ্গোলিয়ায় আবিষ্কৃত হয়েছে টি-রেক্সের একটি আত্মীয়, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘খানখুলু মঙ্গোলিয়েনসিস’—অর্থাৎ ‘মঙ্গোলিয়ার ড্রাগন প্রিন্স’। এই আবিষ্কার টি-রেক্সের বিবর্তন এবং ডাইনোসরদের জীবন সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
প্রায় ৮৬ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেসিয়াস যুগে মঙ্গোলিয়ায় বাস করত খানখুলু। বিজ্ঞানীরা দুটি আংশিক কঙ্কাল থেকে এই নতুন প্রজাতি শনাক্ত করেছেন।
কঙ্কালগুলোর মধ্যে মাথার খুলির কিছু অংশ, মেরুদণ্ড, কোমরের কিছু হাড় এবং পায়ের হাড় বিদ্যমান। বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, খানখুলু ছিল তুলনামূলকভাবে ছোট আকারের, প্রায় ১৩ ফুট লম্বা।
টি-রেক্সের তুলনায় এটি ছিল অনেক ছোট, যা কিনা পরবর্তীকালে উত্তর আমেরিকায় ঘুরে বেড়ানো একটি অল্প বয়স্ক টি-রেক্সের আকারের কাছাকাছি।
খানখুলুর জীবাশ্মের গঠন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এর চোখের কোটর ছিল গোলাকার, দাঁতগুলো ছিল ধারালো এবং চোয়ালগুলো ছিল অপেক্ষাকৃত লম্বা ও অগভীর।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, খানখুলু সম্ভবত দ্রুত কামড়ানোর জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত ছিল, শক্ত হাড় চিবানোর জন্য নয়।
ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ জারেড ভোরিস এবং ডারলা জিলেনিতস্কি-র মতে, খানখুলুর আবিষ্কার টাইর্যানোসরদের আদি ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭০-এর দশকে মঙ্গোলীয় জীবাশ্মবিদ আলটানগেরেল পার্লে এই ডাইনোসরের কঙ্কাল আবিষ্কার করেন। প্রথমে এটিকে অ্যালেক্ট্রোসরাসের সঙ্গে তুলনা করা হলেও, পরে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে এটি একটি নতুন প্রজাতি।
এদের নাকের হাড়ের মধ্যে একটি বিশেষ বায়ু প্রকোষ্ঠ ছিল, যা অন্য কোনো টাইর্যানোসরদের মধ্যে দেখা যায় না।
এই আবিষ্কার টাইর্যানোসরদের বিবর্তনের একটি নতুন চিত্র তুলে ধরে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, খানখুলুর মতো ছোট আকারের টাইর্যানোসর প্রজাতিগুলো একসময় এশিয়া থেকে উত্তর আমেরিকায় এসেছিল।
এরপরেই টাইর্যানোসররা উত্তর আমেরিকাজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন প্রজাতিতে বিভক্ত হতে শুরু করে। এদের মধ্যে কেউ ছোট শিকারের জন্য হালকা গড়নের ছিল, আবার কেউ বড় শিকারের জন্য শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
গবেষকরা আরও মনে করেন, টি-রেক্সের সরাসরি পূর্বপুরুষ উত্তর আমেরিকায় বিবর্তিত হয়নি। বরং, তারা সম্ভবত প্রায় ৭৯ থেকে ৭৮ মিলিয়ন বছর আগে এশিয়াতে ফিরে যায়।
এই সময়ে, টাইর্যানোসরদের মধ্যে দুটি প্রধান দল গঠিত হয়। একটি দল ছিল খানিকটা হালকা গড়নের, যাদের লম্বাটে মুখ এবং ছোট শিং ছিল।
অন্য দলটি আকারে বড় হতে শুরু করে, যাদের শক্তিশালী চোয়াল ছিল হাড় ভাঙার জন্য উপযুক্ত। টি-রেক্স এই দ্বিতীয় দল থেকেই বিবর্তিত হয়েছে এবং প্রায় ৭৩ থেকে ৬৭ মিলিয়ন বছর আগে তারা পুনরায় উত্তর আমেরিকায় ফিরে আসে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জীবাশ্মবিদ ক্যাসিয়াস মরিসন মনে করেন, খানখুলুর আবিষ্কার টি-রেক্স এবং এর আত্মীয়দের বিবর্তনের সাফল্যের কারণ বুঝতে সাহায্য করে।
এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যে টাইর্যানোসরদের আসা-যাওয়ার মাধ্যমেই টি-রেক্সের মতো বিশাল শিকারীর উদ্ভব হয়েছিল।
যদি প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষ না হতো, তাহলে সম্ভবত টাইর্যানোসরদের বিবর্তন আরও দীর্ঘকাল ধরে চলত।
এই আবিষ্কার ডাইনোসরদের বিবর্তন এবং তাদের জীবন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক