ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপ: কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে এক অসাধারণ গন্তব্য।
কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপ (Vancouver Island) – যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব লীলাভূমি। বিশাল এই দ্বীপটি কেবল উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের বৃহত্তম দ্বীপই নয়, এটি একইসঙ্গে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর মানুষের সংস্কৃতি মিশে থাকার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই দ্বীপ হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য। এখানকার শান্ত পরিবেশ, পাহাড়, সমুদ্র, আর বনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যে কারো মন জয় করে নিতে পারে।
ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের পূর্ব উপকূল, বিশেষ করে নানাইমো (Nanaimo) থেকে শুরু করে পোর্ট হার্ডি (Port Hardy) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। এখানকার শান্ত সমুদ্র সৈকতগুলোতে হেঁটে বেড়ানো, তিমি (whale) দেখা, এমনকি স্যামন মাছ ধরার মতো অভিজ্ঞতাগুলো এখানে আসা পর্যটকদের জন্য সবসময়ই বিশেষ কিছু হয়ে থাকে।
যারা প্রকৃতির নীরবতা ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই দ্বীপ যেন এক স্বর্গরাজ্য।
দ্বীপটিতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর (First Nations people) দীর্ঘদিনের বসবাস রয়েছে। এখানকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গভীর ছাপ আজও বিদ্যমান।
এখানকার স্থানীয় আর্ট গ্যালারিগুলোতে তাদের শিল্পকর্ম দেখা যায়। এছাড়াও, অ্যালার্ট বে-তে (Alert Bay) রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টোটেম পোল (totem pole), যা এখানকার আদিবাসী সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপে ভ্রমণের শুরুটা হতে পারে নানাইমো (Nanaimo) থেকে। এখানকার ঐতিহ্যবাহী নানাইমো বার-এর স্বাদ নিতে পারেন। এরপর, আপনি পার্কসভিলে (Parksville) এবং কোয়ালিকাম বিচ (Qualicum Beach)-এর সুন্দর সমুদ্র সৈকতগুলোতে ঘুরতে যেতে পারেন।
এখানকার শান্ত সমুদ্রের ধারে হেঁটে বেড়ানো মনকে শান্তি এনে দেয়।
এরপর, কমোক্স ভ্যালি’র (Comox Valley) কোর্টেনি (Courtenay) শহরেও ঘুরে আসতে পারেন। এখানে ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট আর বিভিন্ন দোকান রয়েছে। এখানকার “পটার্স প্লেস গ্যালারি”-তে (Potters Place Gallery) স্থানীয় শিল্পীদের সিরামিকের কাজ দেখা যায়।
এছাড়াও, “স্পিরিটস অফ দ্য ওয়েস্ট কোস্ট আর্ট গ্যালারি” (Spirits of the West Coast Art Gallery) এবং “আই-হোস গ্যালারি”-তে (I-Hos Gallery) আদিবাসী শিল্পকর্ম, যেমন— মুখোশ ও গহনা দেখা যেতে পারে।
যারা মাছ ধরতে ভালোবাসেন, তারা ক্যাম্পবেল রিভার (Campbell River)-এ যেতে পারেন। একে “স্যামন মাছের রাজধানী” ও বলা হয়। এখানে আপনি বিভিন্ন প্রজাতির স্যামন মাছ দেখতে পাবেন।
এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা খুবই উপভোগ্য। এখানকার উপকূলীয় অঞ্চলে তিমি দেখারও সুযোগ রয়েছে। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত হাম্পব্যাক তিমি এবং সারা বছরই ওরাকা (orcas) দেখা যায়।
যারা একটু পাহাড় ভালোবাসেন, তারা এলক ফলস প্রভিন্সিয়াল পার্কে (Elk Falls Provincial Park) যেতে পারেন। এখানকার গভীর অরণ্যে হেঁটে যাওয়া এবং ঝর্ণার দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর। এছাড়াও, এখানকার সাসপেনশন ব্রিজ থেকে ৮২ ফুট উঁচু এলক জলপ্রপাতের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
দ্বীপের উত্তর দিকে হাইওয়ে ১৯ ধরে প্রায় দুই ঘণ্টা গাড়ি চালালে আপনি পোর্ট ম্যাকনেইলে (Port McNeil) পৌঁছাবেন। এখান থেকে ফেরিতে করে করমোরেন্ট দ্বীপের (Cormorant Island) অ্যালার্ট বে-তে যাওয়া যায়।
এখানে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টোটেম পোল, যা এখানকার আদিবাসী সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
পোর্ট হার্ডি (Port Hardy)-তে ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের সড়কপথ শেষ হয়েছে। এখান থেকে আপনি গ্রেট বিয়ার রেইনফরেস্টের (Great Bear Rainforest) দিকে যেতে পারেন।
শতবর্ষী গাছ, ঝর্ণা আর ভাল্লুকের (bear) আবাসস্থল হলো এই রেইনফরেস্ট। আপনি যদি বন্য জীবন ও প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে চান, তবে এই স্থানটি আপনার জন্য আদর্শ।
ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপে থাকার জন্য কয়েকটি ভালো হোটেল হলো— ক্যাম্পবেল রিভারের “ন্যাচারালি প্যাসিফিক রিসোর্ট”, পোর্ট হার্ডির আদিবাসী মালিকানাধীন “কোয়ালিলাস হোটেল” এবং গ্রেট বিয়ার রেইনফরেস্টের কাছে অবস্থিত “নিম্মো বে ওয়াইল্ডারনেস রিসোর্ট”।
খাবার ভালোবাসেন এমন মানুষের জন্য এখানে রয়েছে নানা ধরনের সুস্বাদু খাবারের আয়োজন। ফ্যানি বে ওয়েস্টার্স সিফুড শপে (Fanny Bay Oysters Seafood Shop) তাজা ওয়েস্টার্স (oysters)-এর স্বাদ নিতে পারেন।
এছাড়াও, শেল্টার পয়েন্ট ডিস্টিলারি-তে (Shelter Point Distillery) তৈরি হওয়া হুইস্কি-র স্বাদও নিতে পারেন। ক্যাম্পবেল রিভারের “কার্ভ কিচেন + মিটরি”-তে (Carve Kitchen + Meatery) স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি খাবার পাওয়া যায়।
পোর্ট হার্ডির কোয়ালিলাস হোটেলে অবস্থিত “হা’মে’ রেস্টুরেন্ট”-এ (Ha’me’ Restaurant) আদিবাসী সংস্কৃতি ও খাবারের এক দারুণ মিশ্রণ উপভোগ করতে পারবেন।
ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপ, প্রকৃতির সৌন্দর্য ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিলনস্থল। যারা প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চান এবং নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য এই দ্বীপ একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক