মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক ধরপাকড় নিয়ে প্রতিবাদ ক্রমশ বাড়ছে, গ্রেপ্তার ও কারফিউ জারি।
যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে অভিবাসন বিষয়ক ধরপাকড়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বাড়ছে। বিভিন্ন শহর থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রতিবাদে আসন্ন সপ্তাহান্তে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি চলছে।
বিভিন্ন শহরে, বিশেষ করে লস অ্যাঞ্জেলেসে, ফেডারেল ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর বিরুদ্ধে হওয়া প্রতিবাদগুলোতে কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করেছে। এরই মধ্যে কয়েকশ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রায় ৪,০০০ ন্যাশনাল গার্ড সেনা ও ৭০০ মেরিন সেনা সদস্যকে লস অ্যাঞ্জেলেসে মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে এক ফেডারেল বিচারক ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। বিচারক এই পদক্ষেপকে বেআইনি এবং সংবিধানের পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেন।
হোয়াইট হাউস এই রায়কে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছে এবং এর বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছে। আদালত আগামী ১৭ই জুন শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
বিক্ষোভের কারণে লস অ্যাঞ্জেলেস এবং স্পোকানে কারফিউ জারি করা হয়েছে। টেক্সাস ও মিসৌরির রিপাবলিকান গভর্নররা তাদের রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা যায়।
আগামী শনিবার, ট্রাম্পের সামরিক কুচকাওয়াজের দিন দেশজুড়ে ‘নো কিংস’ নামে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, অভিবাসন বিষয়ক ধরপাকড় ও বিতাড়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
বিভিন্ন শহরের প্রতিবাদের চিত্র:
লাস ভেগাসে বুধবার রাতের এক প্রতিবাদে ৯৪ জনকে বিভিন্ন অপরাধ ও ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই বিক্ষোভে প্রায় ৮০০ লোক অংশ নিয়েছিল। পুলিশের ওপর পাথর ও বোতল ছোড়ার অভিযোগও উঠেছে।
শিকাগোতে: বৃহস্পতিবার কয়েকশ বিক্ষোভকারী একটি পার্কে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভকারীরা নিজেদের রক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে এবং নির্বাচিত কর্মকর্তাদের মুখ খোলার আহ্বান জানায়। পরে তারা শহরের প্রধান সড়ক মিশিগান অ্যাভিনিউতে মিছিল করে।
সিয়াটলে: বুধবার সন্ধ্যায় কয়েকশ বিক্ষোভকারী একটি ফেডারেল ভবনের সামনে মিছিল করে, যেখানে অভিবাসন বিষয়ক মামলার শুনানি হয়। বিক্ষোভকারীরা একটি ডাম্পস্টারে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ভবনের দেয়ালে ‘আইস নিপাত যাক’ লিখে দেয়।
স্পোকেন, ওয়াশিংটন: বুধবার আইস অফিসের বাইরে হওয়া একটি বিক্ষোভের পর মেয়র লিসা ব্রাউন শহরে কারফিউ জারি করেন। এই বিক্ষোভে ৩০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয় এবং পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর পিপার বল ছুঁড়েছিল।
স্যান আন্তোনিও: টেক্সাসের ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে কয়েকশ বিক্ষোভকারী শহরের কেন্দ্রস্থল দিয়ে মিছিল করে।
টুসন, অ্যারিজোনা: বুধবার আইস অফিসের বাইরে মুখোশ পরা নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে এবং অফিসের গেটে অ্যান্টি-আইস গ্রাফিতি আঁকে।
অ্যাঙ্করেজ, আলাস্কা: আলাস্কার correctional complex-এর বাইরে, যেখানে আইস প্রায় ৪০ জনকে আটক করে রেখেছে, সেখানে বিক্ষোভকারীরা টানা চার দিন ধরে বিক্ষোভ করে।
‘নো কিংস’ বিক্ষোভ: আয়োজকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সপ্তাহে দেশজুড়ে প্রায় ২,০০০ স্থানে ‘নো কিংস’ বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ফ্লোরিডায়, অ্যাটর্নি জেনারেল জেমস উথমিয়ার সতর্ক করে বলেছেন কোনো ‘নো কিংস’ বিক্ষোভকারী সহিংসতায় জড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিচার বিভাগের একজন কর্মকর্তা দেশটির অ্যাটর্নিদের সহিংসতা ও ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
গভর্নর ও ন্যাশনাল গার্ড: টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এবং মিসৌরির গভর্নর মাইক কেহো আসন্ন বিক্ষোভের আগে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস