যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে একটি আপিল আদালত। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নবম সার্কিট ইউএস কোর্ট অফ আপিলস এক ফেডারেল বিচারকের দেওয়া নির্দেশকে স্থগিত করে, যেখানে ন্যাশনাল গার্ডের সৈন্যদের ক্যালিফোর্নিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
আদালত মঙ্গলবার এই বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছে। এই স্থগিতাদেশ আসে, যখন ফেডারেল বিচারকের আগের নির্দেশ শুক্রবার দুপুরের মধ্যে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে, ইউএস জেলা জজ চার্লস ব্রেইয়ার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনকে অবৈধ ঘোষণা করেন। তিনি জানান, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দশম সংশোধনী লঙ্ঘন করেছে এবং ট্রাম্পের আইনগত অধিকারের বাইরে ছিল।
বিচারকের এই রায় শুধুমাত্র ন্যাশনাল গার্ডের সৈন্যদের জন্য প্রযোজ্য ছিল, মেরিন সেনাদের ক্ষেত্রে নয়। মেরিন সেনারা তখনও লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভে সরাসরি অংশ নেয়নি বলেই তিনি তাদের বিষয়ে কোনো রায় দেননি।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম, যিনি অভিবাসন অভিযানের সময় সৈন্যদের সাহায্য বন্ধ করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন, বিচারকের আগের রায়ের প্রশংসা করেছিলেন। নিউসাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “আজ গণতন্ত্রের একটি পরীক্ষা ছিল এবং আমরা সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।”
হোয়াইট হাউস ব্রেইয়ারের এই রায়কে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করে জানায়, এটি “আমাদের সাহসী ফেডারেল কর্মকর্তাদের ঝুঁকিতে ফেলবে”। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি এক বিবৃতিতে বলেন, “রাষ্ট্রপতি কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার বেআইনি লস অ্যাঞ্জেলেসে ফেডারেল ভবন ও কর্মীদের রক্ষার জন্য ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন অবিলম্বে এই ক্ষমতা অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আপিল করবে এবং চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য অপেক্ষা করছে।
এদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টির নেভাল ওয়েপনস স্টেশন সিল বিচে প্রায় ৭০০ মেরিন সেনা নাগরিক অস্থিরতা মোকাবিলার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। রাজ্যের আইনজীবী নিকোলাস গ্রিন আদালতকে জানান, গভর্নরের কার্যালয় থেকে তিনি জানতে পেরেছেন যে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৪০ জন মেরিন লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের প্রতিস্থাপন করবেন।
সাধারণত, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ক্ষমতা গভর্নরদের হাতে থাকে। তবে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টও এই বাহিনী পাঠাতে পারেন।
ট্রাম্প ‘টাইটেল ১০’ নামক একটি আইনের অধীনে ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের ফেডারেল সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই আইনের অধীনে, দেশের উপর আক্রমণ হলে, সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দিলে অথবা প্রেসিডেন্ট যদি যুক্তরাষ্ট্রের আইন কার্যকর করতে অক্ষম হন, তাহলে ন্যাশনাল গার্ডকে ফেডারেল সার্ভিসে ডাকা যেতে পারে।
বিচারক ব্রেইয়ার তার রায়ে বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসের পরিস্থিতি বিদ্রোহের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। তিনি আরও বলেন, “লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভ ‘বিদ্রোহের’ পর্যায়ে পড়ে না।
গভর্নর নিউসাম তার আপত্তির পরেও গার্ড মোতায়েন করার বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে, তিনি সৈন্যদের অভিবাসন অভিযানে সহায়তা করা থেকে বিরত রাখতে জরুরি আবেদন জানান।
গভর্নরের যুক্তি ছিল, সৈন্যদের মূল মোতায়েনের উদ্দেশ্য ছিল ফেডারেল ভবনগুলোর নিরাপত্তা দেওয়া। অভিবাসন অভিযানে জড়িত করা হলে উত্তেজনা আরও বাড়বে এবং নাগরিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।
টাস্ক ফোর্স ৫১-এর কমান্ডার মেজর জেনারেল স্কট শেরম্যান জানিয়েছেন, বুধবার পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জন গার্ড সদস্যকে অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অভিযানে যাওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
অভিবাসন কর্মকর্তারা এরই মধ্যে সৈন্যদের ছবি প্রকাশ করেছেন, যেখানে তাদের অভিবাসন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দিতে দেখা যাচ্ছে।
শেরম্যান আরও জানান, কোনো মেরিন সেনাকে অভিবাসন অভিযানে যাওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি এবং তাদের এই কাজে ব্যবহার করা হবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বিচারক ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ভুল আখ্যা দিয়ে বলেন, ট্রাম্প শুরুতেই গার্ডকে সঠিকভাবে ডাকেননি।
মামলার যুক্তি ছিল, টাইটেল ১০-এর অধীনে ন্যাশনাল গার্ডকে নির্দেশ দেওয়ার আগে প্রেসিডেন্টের গভর্নরদের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। ফেডারেল সরকারের আইনজীবী ব্রেন্ট শুমেইট জানান, ট্রাম্প সৈন্যদের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেনারেলকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন এবং তার এই বাহিনী ডাকার অধিকার রয়েছে, তা তিনি আলোচনা না করলেও পারতেন।
বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, ট্রাম্পের এই আদেশের বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার কোনো সুযোগ নেই। বিচারক ব্রেইয়ার, যিনি একসময় সংবিধানের একটি কপি প্রদর্শন করেন, দ্বিমত পোষণ করে বলেন, “আমরা এখানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রয়োগের কথা বলছি এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
একটি সাংবিধানিক সরকারের সঙ্গে কিং জর্জের এটাই পার্থক্য।”
ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘোষণার পর লস অ্যাঞ্জেলেসের অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভ তীব্র হয় এবং তা বোস্টন, শিকাগো ও সিয়াটলের মতো শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেসকে এমনভাবে চিত্রিত করেছেন, যা মেয়র ক্যারেন বাস ও গভর্নর নিউসামের মতে, বাস্তবতার ধারে কাছেও নেই।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস