ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহু আকাঙ্ক্ষিত সামরিক কুচকাওয়াজ: সমালোচনার ঝড়
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই চেয়েছিলেন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে (Washington, D.C.) বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ হোক। অবশেষে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।
শনিবার (parade is on Saturday), মার্কিন সেনাবাহিনীর আড়াইশো বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই কুচকাওয়াজটি একইসঙ্গে ট্রাম্পের ৭৯তম জন্মদিনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে এমন বিশাল সামরিক প্রদর্শনী ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সমাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত কুচকাওয়াজের সময় দেখা গিয়েছিল।
তবে, ট্রাম্পের এই সামরিক কুচকাওয়াজ আয়োজনের সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অনেকে একে ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন।
বিশেষ করে, যখন দেশের অভ্যন্তরে সৈন্যদের মোতায়েন করা হয়েছে, তখন এমন সামরিক শক্তি প্রদর্শনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অনুষ্ঠানটি নিয়ে সামরিক কর্মকর্তাদের মাঝেও দ্বিধা রয়েছে। তাঁদের মতে, এই ধরনের আয়োজন উত্তর কোরিয়ার মতো স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের ইঙ্গিত বহন করে।
এমনকি, ট্রাম্পের দলের কিছু সদস্যও এই কুচকাওয়াজের বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের মতে, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা যেত।
কুচকাওয়াজে থাকবে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ও সৈন্য সমাবেশ। এতে ২৮টি আব্রাহামস ট্যাংক (প্রতিটির ওজন ৭০ টন), বিভিন্ন যুগের সৈন্যদের পোশাক ও সরঞ্জাম, গোল্ডেন নাইট প্যারাশ্যুট প্রদর্শনী দল, একটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন বি-২৫ বোমারু বিমান, ৬,৭০০ সৈন্য, ৫০টি হেলিকপ্টার, ৩৪টি ঘোড়া, দুটি খচ্চর এবং একটি কুকুর অংশ নেবে।
অনুষ্ঠানটি সফল করতে কয়েক কোটি ডলার খরচ হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অনুদানও রয়েছে। যদিও আয়োজকদের পক্ষ থেকে এই খরচকে কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
কুচকাওয়াজের কারণে ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দাদের জন্য এরই মধ্যে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বিমান চলাচলে কিছু সময়ের জন্য বিঘ্ন ঘটারও সম্ভাবনা রয়েছে।
এই কুচকাওয়াজের দিনটিতে ট্রাম্পের নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প, যা তাঁর কর্তৃত্ববাদী আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের এই সামরিক কুচকাওয়াজের ধারণা নতুন নয়। ২০১৭ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর সঙ্গে প্যারিসে বাস্তিল দিবসের কুচকাওয়াজ দেখার পরেই তিনি এমন আয়োজনের স্বপ্ন দেখেন।
সেই সময়কার কুচকাওয়াজে কামান, ট্যাংক, ঘোড়া, বিমান ও হেলিকপ্টার-এর মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী ছিল। ট্রাম্প সেই সময় বলেছিলেন, “এরকম একটা কিছু করার চেষ্টা করতে হবে।
তবে, প্রথম মেয়াদে তাঁর এই পরিকল্পনা সফল হয়নি। ব্যয়বহুলতার কারণে সামরিক কর্মকর্তাদের আপত্তির মুখে সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়।
কিন্তু দ্বিতীয়বার ক্ষমতা ফিরে আসার পর, সেনাবাহিনীর বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত একটি ছোট অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকে বিশাল রূপ দেন ট্রাম্প।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, “অন্যান্য স্বৈরাচারী শাসকের মতো, ট্রাম্পও তাঁর জন্মদিন উদ্যাপন করতে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন