যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তাদের আকস্মিক অভিযানে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন অভিবাসী শ্রমিকেরা। সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে চালানো ধরপাকড়ের কারণে কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন তারা, কিন্তু জীবিকার তাগিদে ঘরে বসে থাকারও উপায় নেই তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকার কৃষি, নির্মাণ, স্বাস্থ্য ও আতিথেয়তা শিল্পে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট, যা অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে, বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ার অক্সনার্ডে অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর কর্মকর্তারা শ্রমিকদের উপর অভিযান চালান। অনেক সময় ভোরের আলো ফোটার আগেই ক্ষেতখামারে কাজ করা শ্রমিকদের ধাওয়া করতে দেখা যায় তাদের।
আতঙ্কে অনেকে কাজ ছেড়ে পালিয়ে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক জানান, কাজের সন্ধানে তাদের প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়, কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কাজ করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে অভিবাসন বিরোধী কঠোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। বর্তমানেও সেই নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে।
জানা গেছে, অভিবাসন কর্মকর্তাদের মূল লক্ষ্য হলো, দ্রুত ডিটেনশন বা আটক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। কিন্তু এর ফলে বৈধ-অবৈধ উভয় ধরনের অভিবাসী শ্রমিকদের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অভিবাসী শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। দেশটির মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৪ থেকে ৫ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিক, যাদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও নির্মাণ শিল্পে কাজ করেন।
কিন্তু শ্রমিকদের মধ্যে ভীতি তৈরি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে শিল্প-কারখানা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর মতে, বর্তমানে শ্রমিকরা কাজ হারানোর ভয়ে ভীত, কারণ তাদের পরিবার পরিজন রয়েছে, যাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাদেরই। বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ— সবকিছু তাদেরই দেখতে হয়।
কাজ বন্ধ হয়ে গেলে তাদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে, শ্রমিক সংকটের কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এমনকি দেশটির বিভিন্ন শহরে, বিশেষ করে লস অ্যাঞ্জেলেসে দোকানগুলোতে খাদ্য সংকট দেখা যাচ্ছে, কারণ শ্রমিকরা কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
হোম ডিপোর মতো নির্মাণ সামগ্রীর দোকানে শ্রমিক আটকের ঘটনাও ঘটছে। নির্মাণ শ্রমিকরা প্রায়ই এই দোকানগুলোর সামনে কাজ খুঁজে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে অভিবাসন কর্মকর্তাদের ধরপাকড়ের কারণে অনেক শ্রমিক কাজ হারাচ্ছেন।
কর্মক্ষেত্রগুলোতে আইস-এর অভিযান ব্যাপক হারে বাড়ছে। এর ফলে ছোট ব্যবসার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গত সপ্তাহে ওমাহা শহরের একটি মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় অভিযান চালানোর পর সেখানকার কর্মক্ষমতা ৩০ শতাংশে নেমে এসেছিল।
রেস্টুরেন্ট শিল্পেও প্রায় ১০ শতাংশ শ্রমিক হয় অবৈধ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সুযোগ থাকলেও সেই অনুযায়ী কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে অনেক অভিবাসী, যারা বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি পাননি, তারাও বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন