ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা অবশেষে নতুন মোড় নিয়েছে। সম্প্রতি ইসরায়েল ইরানের উপর আক্রমণ চালিয়েছে, যা উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান গভীর শত্রুতার চূড়ান্ত প্রকাশ।
এই আক্রমণের পেছনে রয়েছে দশকের পর দশক ধরে চলা ছায়াযুদ্ধ, যা গুপ্ত হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই ইসরায়েলকে নিজেদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে আসছে ইরান। এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করে ইসরায়েলের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা।
অন্যদিকে, ইসরায়েল মনে করে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং তাদের মিত্রদের মাধ্যমে অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা তাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই ইরানকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং ইসরায়েল বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করার বিষয়টি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন।
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে ওঠে, যা এই অঞ্চলের উত্তেজনাকে নতুন স্তরে নিয়ে যায়। এর ফলস্বরূপ, ইরানের মিত্ররাও ইসরায়েলের আক্রমণের শিকার হয় এবং ইরান কার্যত একা হয়ে পড়ে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে শত্রুতার মূল কারণগুলো হলো: ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানের পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি বিদ্বেষ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েলের প্রতি।
এরপর, গত দুই দশকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে একাধিকবার গোপন হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও ইসরায়েল সরাসরি এসব হামলার কথা স্বীকার করে না।
ইরানের দাবি, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে, তবে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) সতর্ক করেছে যে, ইরান সম্ভবত অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে।
নেতানিয়াহু মনে করেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা হলে তা ইসরায়েলের জন্য একটি বড় হুমকি হবে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইরানের আঞ্চলিক মিত্রদের দুর্বল করার চেষ্টা করছেন, যাদের মধ্যে হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা উল্লেখযোগ্য।
সম্প্রতি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনও ইসরায়েলের জন্য সহায়ক হয়েছে।
ইসরায়েল মনে করে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার এটাই উপযুক্ত সময়। নেতানিয়াহু বলছেন, ইরান খুব দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি প্রতিরোধের জন্য সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে, তবে তারা কূটনৈতিক সমাধানেরও চেষ্টা করছে। ওমানে আলোচনার ষষ্ঠ দফা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তবে সাম্প্রতিক ঘটনার পর তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েল মনে করে, এ ধরনের আলোচনা ইরানের অস্ত্র তৈরির সুযোগ করে দিতে পারে। তারা চায়, ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করুক, যা ইরান মানতে নারাজ।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস