যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে মুক্তি চেয়ে আইনি লড়াইয়ে নামা হয়েছে এক এল সালভাদরের নাগরিক কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার। মানব পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত এই ব্যক্তির জামিন শুনানি চলছে, যেখানে বিচারক নির্ধারণ করবেন তাকে প্রি-ট্রায়াল ডিটেনশন থেকে মুক্তি দেওয়া হবে কিনা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন তাকে ভুল করে দেশ থেকে বিতাড়িত করার পর এই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়া এল সালভাদরের নাগরিক, যিনি এক দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। কিন্তু গত মার্চ মাসে তাকে বিতাড়িত করা হয়।
যদিও এর আগে ২০১৯ সালে একটি আদালতের রায়ে তাকে নিজ দেশে ফেরত না পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কারণ সেখানে তার জীবনহানির আশঙ্কা ছিল।
আদালতে শুনানির শুরুতে গার্সিয়ার স্ত্রী জেনিফার ভাসকুয়েজ সুরা জানান, ট্রাম্প প্রশাসন তার স্বামীকে অপহরণ করে লুকিয়ে রেখেছিল এবং তাদের পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
কান্নায় ভেঙে পড়া জেনিফার জানান, তিনি এই প্রথম তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি আরও বলেন কিলমার তাদের সবার কাছে “বিশ্বাস” রাখতে বলেছেন এবং যারা তাদের পরিবারকে সমর্থন করছেন, তাদের “লড়াই চালিয়ে যাওয়ার” আবেদন জানিয়েছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন, ঈশ্বর তাদের সঙ্গে আছেন এবং তারা অবশ্যই জয়ী হবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা আদালতে গার্সিয়াকে জামিনে মুক্তি না দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। তাদের মতে, গার্সিয়া সমাজের জন্য বিপজ্জনক এবং তিনি পালিয়ে যেতে পারেন।
প্রসিকিউটররা তাকে মানব পাচারের পাশাপাশি মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসা এবং নারীদের প্রতি সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন। যদিও এই ধরনের কোনো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়নি।
অন্যদিকে, গার্সিয়ার আইনজীবীরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এটিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের দাবি, গার্সিয়া একজন সাধারণ নির্মাণ শ্রমিক এবং একজন পরিবার-অন্তপ্রাণ মানুষ।
তারা আরও বলছেন, সরকারের এই পদক্ষেপ মূলত গার্সিয়াকে ভুলভাবে বিতাড়িত করার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা।
কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার বিরুদ্ধে আনা মানব পাচারের অভিযোগের সূত্রপাত হয় ২০২২ সালের মে মাসে, যখন টেনেসিতে একটি ট্রাফিক স্টপে তিনি ধরা পড়েন।
ঐ সময় গাড়িতে তার সঙ্গে আরও আটজন যাত্রী ছিলেন। যদিও সেই ঘটনার সময় তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
গার্সিয়ার আইনজীবীরা মনে করেন, সরকার ইচ্ছে করেই গুরুতর অভিযোগের আশ্রয় নিচ্ছে, যাতে তাদের মক্কেলকে আটকে রাখা যায়। তাদের মতে, মানব পাচারের সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর হলেও, সাধারণত এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে ১৫ মাসের বেশি সাজা হয় না।
এদিকে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে ভুলভাবে বিতাড়িত করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে পদত্যাগ করেছেন টেনেসির মার্কিন অ্যাটর্নি অফিসের ক্রিমিনাল বিভাগের প্রধান বেন শ্র্যাডার।
তিনি তার পদত্যাগের কারণ হিসেবে সরাসরি কিছু না বললেও, সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে এই ঘটনার সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।