স্পেনের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের গ্যালিসিয়া প্রদেশের একটি শহর, সান্টিয়াগো দে কম্পোস্টেলার কথা। এই শহরটি শুধু স্পেনের নয়, সারা বিশ্বের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিসেবে সুপরিচিত।
প্রতি বছর বহু মানুষ এখানে আসেন, যা এটিকে ভ্যাটিকান ও জেরুজালেমের মতোই গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল সেন্ট জেমসের ক্যাথেড্রাল, যাঁর সমাধিক্ষেত্র এই শহরে অবস্থিত বলে মনে করা হয়।
সেন্ট জেমসের (যিনি যিশুর বারো জন শিষ্যের একজন ছিলেন) কাহিনী এক রহস্যময় ঘটনার জন্ম দেয়। প্রচলিত আছে, প্রথম শতকে জেরুজালেমে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দেহাবশেষ স্পেনে নিয়ে আসা হয়েছিল।
দীর্ঘদিন পরে, নবম শতকে এক সন্ন্যাসীর মাধ্যমে তাঁর সমাধিস্থলটি পুনরায় আবিষ্কৃত হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় এই পবিত্র স্থানে তীর্থযাত্রীদের আগমন। এই ঘটনার পরেই তৈরি হয় সান্টিয়াগো দে কম্পোস্টেলার খ্যাতি, যা আজও অটুট।
এই শহরের কেন্দ্রবিন্দু হল “ক্যামিনো দে সান্টিয়াগো” (Camino de Santiago) বা “সেন্ট জেমসের পথ”। এটি তীর্থযাত্রীদের হেঁটে আসা একটি পথ, যা কিনা বিভিন্ন দিক থেকে সান্টিয়াগো দে কম্পোস্টেলার দিকে গেছে।
এই পথ ধরে হেঁটে আসাটা অনেক তীর্থযাত্রীর কাছে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। পায়ে হেঁটে এই পথ অতিক্রম করা তাঁদের কাছে এক ধরণের আত্মিক শান্তির প্রতীক।
শুধু ধর্মপ্রাণ মানুষই নন, আজকাল অনেকেই প্রকৃতির কাছাকাছি আসার জন্য এবং নিজেদের আত্ম-অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে এই পথ বেছে নিচ্ছেন।
২০২৪ সালে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ এই পথ সম্পূর্ণ করেছেন। এই পথ হয় হেঁটে, না হয় সাইকেল চালিয়ে অতিক্রম করতে হয়।
কেউ কেউ এই পথকে ক্যাথলিকদের প্রার্থনার সঙ্গে তুলনা করেন, আবার কারও কাছে এটা ব্যক্তিগত উন্নতির সুযোগ। এমনকি, এমনও শোনা যায়, কেউ কেউ তাদের বাড়ি থেকে হেঁটে যাত্রা শুরু করেছেন, আবার কেউ গন্তব্যে পৌঁছানোর পরেও হাঁটা থামাননি।
ঐতিহ্য আজও এই শহরের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ক্যাথেড্রালের ভেতরে গেলে দেখা যায়, সেন্ট জেমসের সমাধির কাছে গিয়ে তীর্থযাত্রীরা প্রার্থনা করেন।
এছাড়া, পুরাতন শহরে রয়েছে সন্ন্যাসীদের তৈরি করা ঐতিহ্যপূর্ণ আবাসস্থল, যেখানে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানকার “মারকাডো দে আবাস্তোস” (Mercado de Abastos) শহরের অন্যতম আকর্ষণ, যেখানে তাজা খাবার পাওয়া যায়।
এখানে গ্যালিসিয়ার স্থানীয় আলু, শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের মাংস ও সামুদ্রিক খাবার পাওয়া যায়।
ঐতিহ্যবাহী এই শহরে, একদিকে যেমন ধর্মীয় আবেগ, তেমনই অন্যদিকে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ শোভা। সবুজ পাহাড় আর মনোরম দৃশ্যের কারণে এটি যেন এক শান্তির আশ্রয়স্থল।
সব মিলিয়ে, সান্টিয়াগো দে কম্পোস্টেলা আজও সারা বিশ্ব থেকে আসা মানুষের কাছে এক বিশেষ স্থান, যেখানে ধর্ম, সংস্কৃতি আর প্রকৃতির এক অপূর্ব মিলন ঘটে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক