ইতালির সংস্কৃতিতে ‘অ্যাপেরitivo’ এক দারুণ অনুষঙ্গ। সন্ধ্যায় যখন কর্মব্যস্ত দিন শেষে সবাই বিশ্রাম নিতে চায়, তখন বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়ে কিছু হালকা খাবার ও পানীয়ের আসর বসে। এটি ইতালীয় সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে।

এই ‘অ্যাপেরitivo’ শব্দটির উৎপত্তি লাতিন শব্দ ‘এপেরি’ থেকে, যার অর্থ ‘খুলে দেওয়া’। খাবারের আগে ক্ষুধা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এই পানীয় সেবনের চল শুরু হয়েছিল প্রাচীন রোমে, যেখানে ধনী পরিবারগুলো ভেষজ মিশ্রিত ওয়াইন পান করত।

বর্তমান সময়ে, ইতালিতে এই ঐতিহ্য আরও আধুনিক রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন বারে এখন অ্যালকোহল-মুক্ত পানীয়ের চাহিদা বাড়ছে, যা ‘analcolico’ নামে পরিচিত। যারা অ্যালকোহল পান করতে চান না, তাদের জন্যও এখানে অনেক সুস্বাদু বিকল্প বিদ্যমান।

আসুন, ইতালির কয়েকটি শহরে এই ‘অ্যাপেরitivo’ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।

তুরিনে, এই সংস্কৃতির প্রথম আধুনিক রূপটি দেখা যায়। ১৮ শতকে, আন্তোনিও বেনেদেত্তো কার্পানো নামের এক ব্যক্তি মিষ্টি ওয়াইন, ভেষজ এবং সুগন্ধি মশলার মিশ্রণে ভার্মুথ তৈরি করেন। এরপর থেকেই ক্যাফে সংস্কৃতির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে।

বর্তমানে, তুরিনে আপনি ক্যাফে প্লাত্তির মতো ঐতিহ্যবাহী স্থানে যেতে পারেন, যেখানে ১৮৭০ দশকের পুরনো নকশা আজও বিদ্যমান। এখানে আপনি ‘অ্যাপুরল স্প্রিজ’-এর অ্যালকোহল-মুক্ত সংস্করণ উপভোগ করতে পারেন, যা লাল সানবিটার দিয়ে তৈরি করা হয়।

এছাড়া, কমলালেবুর রস, টনিক ওয়াটার অথবা ক্লাসিক শার্লি টেম্পলের মতো পানীয়ও সেখানে পাওয়া যায়।

মিলানে ‘অ্যাপেরitivo’র একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। এখানকার মানুষের কাছে ক্যাম্পারি একটি পরিচিত নাম। মিলানের কেন্দ্রে অবস্থিত কাম্পারিনোর ঐতিহাসিক বার থেকে মিলানের গ্যালারিয়া এবং ডুওমোর সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

এখানে অ্যালকোহল-মুক্ত ‘ক্রোডিনো স্প্রিজ’ পাওয়া যায়। এছাড়াও, ‘ইল ড্যান্ডি’তে আর্টিচোক এবং তুলসী দিয়ে তৈরি বিশেষ পানীয়ও পাওয়া যায়। মিলানের নাভিগ্লি এলাকার ম্যাজ ক্যাফেতে সিজন ও রুচি অনুযায়ী নানা ধরনের পানীয় পরিবেশন করা হয়।

বার ম্যানেজার ইমানুয়েল কোসি এবং তার দল এখানে বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহল-মুক্ত পানীয় তৈরি করেন। তাদের ‘ডা গ্র্যান্ড সোরো উন নেগ্রোনি’ হলো নেগ্রোনির একটি অ্যালকোহল-মুক্ত সংস্করণ, যা অ্যাপেরitivo প্রেমীদের কাছে খুবই প্রিয়।

ভেনিসে, আর্টস বার-এর মতো স্থানে আকর্ষণীয় এবং সৃজনশীল নন-অ্যালকোহলিক ককটেল পরিবেশন করা হয়। সেন্ট রেজিস ভেনিসের পেছনের দিকে অবস্থিত এই বারে গ্র্যান্ড ক্যানালের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে।

এখানে আপনি ‘ব্রিটানিয়া ১২০১’ এবং ‘স্পিরিট ইলিউশন’-এর মতো বিশেষ পানীয় উপভোগ করতে পারেন।

ইতালির এই ঐতিহ্য এখন সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। আসুন, কিছু জনপ্রিয় নন-অ্যালকোহলিক পানীয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:

• সেড্রাতা: এটি ইতালির একটি জনপ্রিয় পানীয়। টাসোনি ব্র্যান্ডের সেড্রাতা তৈরি হয় ১৯৫৬ সাল থেকে। এটি ক্যালিব্রিয়ার সিডার ফল থেকে তৈরি করা হয়, যা পানীয়টিকে বিশেষ স্বাদ দেয়। এটি ঠান্ডা করে পরিবেশন করা হয় এবং এর সাথে পুদিনা পাতা ব্যবহার করা হয়।

• কিনোতো: এই পানীয়টি তৈরি হয় লিগুরিয়ান উপকূলের চিনোতো ফল থেকে, যা দেখতে অনেকটা কমলালেবুর মতো। ষোড়শ শতাব্দীতে সাভোনার একজন নাবিক চীন থেকে এটি ইতালিতে নিয়ে আসেন। দারুচিনি এবং রাবার্বের মতো ভেষজের সঙ্গে এই ফলের নির্যাস মিশিয়ে কিনোতো তৈরি করা হয়।

• ক্রোডিনো: এই নন-অ্যালকোহলিক পানীয়টি ১৫টি ভিন্ন ধরনের ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি ১৯৬০-এর দশকে তৈরি হয়েছিল এবং এটি ক্লাসিক অ্যাপেরোল স্প্রিজের একটি দারুণ বিকল্প। এই পানীয়ের মধ্যে লবঙ্গ, এলাচ, ধনে এবং জায়ফলের স্বাদ পাওয়া যায়।

ইতালির ‘অ্যাপেরitivo’ সংস্কৃতি শুধু একটি পানীয় বা খাবারের উৎসব নয়, এটি বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর এক দারুণ উপায়। আপনিও কি এই সংস্কৃতি উপভোগ করতে চান? তাহলে ইতালি ভ্রমণে গেলে এই অভিজ্ঞতা নিতে ভুলবেন না!

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক