ক্যালিফোর্নিয়ার কমটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় এক হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যের অবতারণা হয়। এল সালভাদরের অভিবাসী এলিজাবেথ মেনডোজার মালিকানাধীন ‘রেস্তোরেন্ট ই পাপুসেরিয়া লা সেইবা’র সামনে যখন বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত, ঠিক তখনই মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি।
গত ৭ই জুন, শনিবার বিকালে প্রতিবাদকারীরা যখন মেনডোজার রেস্টুরেন্টের সামনে এসে জড়ো হয়, পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে, যার ফলে সবাই হাঁসফাঁস করতে শুরু করে।
মেনডোজা জানান, প্রথমে কয়েকজন বিক্ষোভকারী তার দোকানে আশ্রয় নেয়। এরপর তিনি কোনো দ্বিধা না করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
মেনডোজা এবং তার কর্মচারীরা বিক্ষোভকারী ও পুলিশের সদস্যদের—উভয় পক্ষকেই—ঠান্ডা পানি দেন, তাদের চোখেমুখে ভেজা কাপড় লাগিয়ে দেন এবং আশ্রয় দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আসা লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফের ডেপুটিদেরও তিনি একইভাবে সাহায্য করেন।
নিজের টিকটক অ্যাকাউন্টে আপলোড করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তার কয়েকজন কর্মচারী দুজন পুলিশ সদস্যের সেবা করছেন।
মেনডোজা জানান, তিনি সবার প্রতি মানবিক আচরণ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি শুধু মানুষ হিসেবে তাদের সাহায্য করেছি। যারা বিক্ষোভ করছিলেন, তাদেরও সাহায্য করতে পেরে আমি খুশি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি তাদের মাস্ক খুঁজে দিই এবং কিছু বিক্ষোভকারীকে আমাদের পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত তোয়ালে দিই, যাতে তারা মুখ ঢাকতে পারে। আমি তাদের দুধও অফার করেছিলাম, কিন্তু আমার কাছে বেশি দুধ ছিল না।”
যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি অনুসারে, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির প্রায় এক কোটি বাসিন্দার অর্ধেকের বেশি হিস্পানিক বা ল্যাটিনো এবং তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ অভিবাসী। মেনডোজা নিজেও কোনো পরিবার ছাড়াই এল সালভাদর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।
১৫ বছর আগে তিনি এই রেস্টুরেন্টটি খোলেন এবং ধীরে ধীরে স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে পরিচিত হন। তিনি বলেন, “আমি ভয় পেয়েছিলাম, যদি কিছু খারাপ হয়, তাহলে হয়তো আমার রেস্টুরেন্ট ভেঙে দেওয়া হবে। কিন্তু আমি এখানেই ছিলাম। আমি অনেক বিক্ষোভকারীর প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছি। আমি তাদের কয়েকজনকে চিনি এবং তারা ভালো মানুষ, তারা আমার গ্রাহক।”
মেনডোজার এই মানবিক আচরণে অনেকে যেমন প্রশংসা করেছেন, তেমনি কেউ কেউ উভয় পক্ষকে সাহায্য করার জন্য সমালোচনাও করেছেন। তবে মেনডোজা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তিনি একজন মানুষ হিসেবে এই কাজটি করেছেন।
তিনি চান, সবাই যেন সবার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। তিনি আরও বলেন, “আমরা অভিবাসীরা ভালো জীবন ও কঠোর পরিশ্রমের জন্য এখানে আসি। মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে ভিনগ্রহের মানুষের মতো আচরণ করা হয়, কিন্তু আমরা তেমন নই।
আমাদের গায়ের রং কালো বলেই যে আমরা আলাদা, তা নয়।”
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতি নিয়ে বিতর্ক চলছে এবং ভবিষ্যতে আরও বিক্ষোভের সম্ভাবনা রয়েছে। মেনডোজার এই দৃষ্টান্ত নিঃসন্দেহে সবার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।
তথ্য সূত্র: সিএনএন