নিউ ইয়র্ক সিটিতে মেয়র নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে মেয়র নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং (Ranked-Choice Voting – RCV) পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো। এই পদ্ধতিতে ভোটাররা একাধিক প্রার্থীর মধ্যে তাদের পছন্দের ভিত্তিতে ভোট দিতে পারেন। এই নির্বাচন প্রক্রিয়াটি কিভাবে কাজ করে, ফলাফল প্রকাশের সময়সূচী, এবং এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
নির্বাচন প্রক্রিয়া:
নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ভোটারদের পছন্দের ভিত্তিতে ভোট প্রদানের জন্য ব্যালটে প্রার্থীদের নাম সাজানো থাকে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীদেরকে এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত ক্রম অনুসারে সাজিয়ে ভোট দেন। যদি কোনো প্রার্থী প্রথম পছন্দের ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পান, তবে তিনি সরাসরি বিজয়ী হন। যদি কোনো প্রার্থী এই সংখ্যা অর্জন করতে না পারেন, তাহলে ভোট গণনা একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়।
এই প্রক্রিয়ায়, যে প্রার্থীর সবচেয়ে কম ভোট থাকে, তাকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর ওই প্রার্থীর জন্য দেওয়া দ্বিতীয় পছন্দের ভোটগুলো অন্য প্রার্থীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া ততক্ষণ চলতে থাকে, যতক্ষণ না পর্যন্ত নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে দুইজন প্রার্থী অবশিষ্ট থাকেন। এই দুইজনের মধ্যে যিনি বেশি ভোট পান, তিনিই বিজয়ী হন।
ফলাফল প্রকাশের সময়সূচী:
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন, অর্থাৎ ভোটের দিন (ধরুন, জুন মাসের ২৪ তারিখ) নিউ ইয়র্ক সিটি নির্বাচন বোর্ড প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করে। এই ফলাফলে সাধারণত নির্বাচনের দিন, আগাম ভোট এবং ২০ জুন পর্যন্ত পাওয়া পোস্টাল ব্যালটগুলির গণনা অন্তর্ভুক্ত থাকে। এর এক সপ্তাহ পর, অর্থাৎ ১ জুলাই, কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত গণনার পর র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এই ফলাফলে চূড়ান্ত বিজয়ীর নাম নাও থাকতে পারে, তবে নির্বাচনে কে এগিয়ে আছে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে, প্রতি মঙ্গলবার বোর্ড আপডেটেড গণনা প্রকাশ করে। এই আপডেটে অতিরিক্ত পোস্টাল ব্যালট এবং নির্বাচনের পরে কর্মকর্তাদের দ্বারা অনুমোদিত অস্থায়ী ব্যালটগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ১৫ জুলাই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ভোট গণনার সময় কিছু সমস্যা:
র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং পদ্ধতিতে কিছু সাধারণ ভুল পরিলক্ষিত হয়। যদি কোনো ভোটার একই পছন্দের প্রার্থীকে একাধিক স্থানে চিহ্নিত করেন, তবে সেই স্থানে তাঁর দেওয়া ভোট বাতিল হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ভোটার প্রথম পছন্দ হিসেবে একজন প্রার্থীকে চিহ্নিত করেন এবং দ্বিতীয় পছন্দের স্থানে একাধিক প্রার্থীকে চিহ্নিত করেন, তবে তাঁর দ্বিতীয় পছন্দের ভোটটি বাতিল হয়ে যাবে।
এছাড়াও, যদি কোনো ভোটার একই প্রার্থীকে প্রতিটি স্থানে চিহ্নিত করেন, তবে সেই ভোটটি প্রথম পছন্দের ভোট হিসেবে গণ্য করা হবে। যদি সেই প্রার্থী বাদ পড়েন, তবে সেই ভোটটিও গণনা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
আগের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা:
২০২১ সালের মেয়র নির্বাচনে র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং পদ্ধতিতে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। একটি ত্রুটির কারণে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর পর্যন্ত পোস্টাল ব্যালটের ফল প্রকাশ করা যায়নি। তবে, এবারের নির্বাচনে এই সমস্যাগুলো সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নিউ ইয়র্ক সিটি নির্বাচন বোর্ডের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ভিনসেন্ট ইগনিজিও জানিয়েছেন, তাঁরা একটি সুষ্ঠু ও নির্ভুল নির্বাচন করতে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।
র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং-এর সুবিধা ও অসুবিধা:
এই পদ্ধতির প্রধান সুবিধা হলো, এটি ভোটারদের একাধিক পছন্দের সুযোগ দেয়। এর ফলে, কোনো প্রার্থী যদি প্রথম রাউন্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হন, তবে ভোটারদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনে সুযোগ থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পদ্ধতিতে নির্বাচনে ভোটারদের আরও বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে।
তবে, কিছু সমালোচক মনে করেন, র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং একটি জটিল পদ্ধতি, যা অনেক ভোটারের কাছে বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এছাড়াও, এতে ভোটের ফলাফল প্রকাশে বেশি সময় লাগতে পারে। সমালোচকদের মতে, এই পদ্ধতি কম অভিজ্ঞ ভোটারদের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং-এর ভবিষ্যৎ:
যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং পদ্ধতির বিরোধিতা করা হয়েছে। বর্তমানে, ১৭টি রাজ্যে এই পদ্ধতির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
উপসংহার:
র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং একটি জটিল পদ্ধতি, যা নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে ভোটাররা একাধিক প্রার্থীর মধ্যে তাঁদের পছন্দের ভিত্তিতে ভোট দিতে পারেন। যদিও এই পদ্ধতির কিছু সুবিধা রয়েছে, যেমন- ভোটারদের আরও বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ, তবে এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এই পদ্ধতির কারণে ভোটের ফলাফল প্রকাশে বেশি সময় লাগতে পারে এবং এটি কিছু ভোটারের কাছে বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন