ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: তৃতীয় দিনেও ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময়, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে গত তিন দিন ধরে চলছে ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময়। উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে, যার ফলস্বরূপ মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে।
রবিবার (স্থানীয় সময়) ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দফতর এবং দেশটির পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। অন্যদিকে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে দেশটির অভ্যন্তরে আঘাত হানে। এই হামলায় বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
সংঘাত আরও দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই, ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ না নেওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল না এবং ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের উপর পাল্টা হামলা চালায়, তবে “যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণ শক্তি” তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।
ট্রাম্প আরও যোগ করেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি “সমঝোতা” হতে পারে এবং এর মাধ্যমে এই “রক্তক্ষয়ী সংঘাত” বন্ধ করা যেতে পারে।
এদিকে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ইরানের নাগরিকদের, বিশেষ করে সামরিক অস্ত্র উৎপাদন কারখানায় কর্মরতদের দ্রুত এলাকা ছাড়ার জন্য সতর্ক করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েল শীঘ্রই সেখানে নতুন করে হামলা চালাতে পারে।
হামলার কারণে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলে একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে অন্তত চারজন নিহত হয়, যাদের মধ্যে ১৩ বছর বয়সী একটি শিশুও রয়েছে।
বাতম ইয়াম শহরে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ৬ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছেন ১৮০ জনের বেশি।
ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দর, বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রমও রবিবার তৃতীয় দিনের মতো বন্ধ ছিল। দেশটির আকাশসীমাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আটকে পড়া ইসরায়েলিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তারা এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে কাজ করছে।
তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে এতে অনেক সময় লাগতে পারে।
ইরানের পক্ষ থেকেও পাল্টা হামলার খবর পাওয়া গেছে। তেহরানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের জাতিসংঘ দূত জানিয়েছেন, তাদের দেশে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জনের বেশি আহত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংঘাত কমাতে জরুরি আহ্বান জানাচ্ছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলা কিছুই না, আগামী দিনগুলোতে তারা আমাদের শক্তির প্রভাব অনুভব করবে।”
সংঘাতের কারণে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনাও স্থগিত করা হয়েছে। ওমান, যারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনার মধ্যস্থতা করছিল, তারা জানিয়েছে রবিবার ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, যা বাতিল করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চলা উত্তেজনাই এই সংঘাতের মূল কারণ। ইরান যদিও বরাবরই বলে এসেছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ, তবে দেশটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস