যুদ্ধবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা: ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মধ্যে ক্ষমতাধর হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা রাশিয়ার
মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রতি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া উভয় পক্ষের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে এই অঞ্চলে একজন প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ খুঁজছে।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। একইসঙ্গে, ইরানের সঙ্গেও তাদের গভীর অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান।
সম্প্রতি ইসরায়েলের সামরিক হামলায় ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার প্রতিক্রিয়ায় ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া উভয় পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সংঘাত কমাতে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
পুতিন উভয় দেশের নেতাদের প্রতি শান্তি ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার এই দ্বিমুখী নীতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের প্রভাব বিস্তারের একটি কৌশল। একদিকে, তারা ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে, অন্যদিকে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে চাইছে।
অনেকের ধারণা, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর মনোযোগ যখন রাশিয়ার দিকে, তখন মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট সম্ভবত মস্কোর জন্য একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে।
এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে পারে, যা রাশিয়ার অর্থনীতিকে সহায়তা করবে।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাশিয়া (সোভিয়েত ইউনিয়ন) একসময় ইসরায়েলের প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করত।
কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। রাশিয়া দ্রুত ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার ও সামরিক সরঞ্জামের প্রধান সরবরাহকারী হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার এই কৌশলগত অবস্থানের কারণে তারা উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো আলোচনা হলে, রাশিয়া সেখানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। তবে, পরিস্থিতি এখনো জটিল এবং যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে এবং এর প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়তে পারে।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই, এই অঞ্চলের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস