ইরান আবারও ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, এতে অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছে এবং বহু লোক আহত হয়েছে। সোমবার ভোরে এই হামলা চালানো হয়, যা উভয় দেশের মধ্যে চলমান যুদ্ধের চতুর্থ দিনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি করেছে।
খবর সূত্রে জানা যায় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে তেল আবিবের কাছে অবস্থিত মার্কিন কনস্যুলেটও রয়েছে। যদিও কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলেও কোনো মার্কিন কর্মী হতাহত হয়নি।
ইরান জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের সামরিক ও পারমাণবিক অবকাঠামোতে ইসরায়েলের হামলার জবাব দিতে প্রায় ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। গত শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২শ’ ২৪ জন ইরানি নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল বলছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় তাদের ২৪ জন নিহত এবং ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইরানের এলিট ফোর্স, কুদস ফোর্সের ১০টি কমান্ড সেন্টারে বিমান হামলা চালিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তেল আবিবের আকাশে ভারী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যা সম্ভবত ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার ফল। মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানায় একটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এতে কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্টের দেয়াল ভেঙে গেছে এবং জানালাগুলোও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
ইসরায়েলের জরুরি বিভাগ, মাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুই নারী ও দুই পুরুষসহ অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বয়স ৭০ এর বেশি।
পেতাহ টিকভার ধ্বংসস্তূপের সামনে ইসরায়েলি পুলিশ মুখপাত্র ডিন এলসডুন বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে দেখছি, আমাদের বেসামরিক নাগরিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন। এটি কেবল একটি দৃশ্য।
আমাদের উপকূল এবং দক্ষিণাঞ্চলে এ ধরনের আরও অনেক স্থান রয়েছে।”
পেতাহ টিকভার বাসিন্দা ইয়োরাম সুকি তার পরিবারকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে গিয়েছিলেন এবং হামলার পর ফিরে এসে দেখেন তার অ্যাপার্টমেন্ট সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমরা অক্ষত আছি।” ঘর হারানোর পরও তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ইরানের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “এটা আমাদের সন্তান ও নাতি-নাতনীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এমডিএ আরও জানিয়েছে, আহত ৮৭ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে গুরুতর আহত এক ৩০ বছর বয়সী নারীও রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকর্মীরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন।
এমডিএ-র প্যারামেডিক ডা. গাল রোসেন বলেন, “আমরা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের স্থানে পৌঁছে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি।” তিনি জানান, তিনি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে ৪ দিন বয়সী একটি শিশুকে উদ্ধার করেছেন।
এর আগে, রোববার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছিলেন, ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে ইরানও তাদের আক্রমণ বন্ধ করবে। তবে সামরিক স্থাপনা ছাড়াও তেল শোধনাগার ও সরকারি ভবনগুলোতে ইসরায়েলের বিমান হামলার পর বিপ্লবী গার্ড সোমবার কঠোর অবস্থান নেয় এবং জানায়, তারা আরও শক্তিশালী, মারাত্মক, সুনির্দিষ্ট ও ধ্বংসাত্মক হামলা চালাবে।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানে ১ হাজার ২শ’ ৭৭ জন আহত হয়েছে। তবে হতাহতের মধ্যে সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির সংখ্যা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো ধারণা করছে, ইরানের হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক একটি ইরানি অধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস’ জানিয়েছে, তারা ৪শ’ জনের বেশি নিহত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে, যাদের মধ্যে ১শ’ ৯৭ জন বেসামরিক নাগরিক।
ইসরায়েল দাবি করছে, ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং পরমাণু বিজ্ঞানীদের ওপর তাদের হামলা চালানোটা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা বন্ধ করার জন্য জরুরি ছিল। ইরান বরাবরই তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশও মনে করে, তেহরান ২০০৩ সালের পর থেকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করেনি।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে এবং তাদের অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা কয়েক মাসের মধ্যে অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস