বার্সেলোনার পোবলেনউ: শিল্পকলার আলোয় ঝলমলে এক নতুন ঠিকানা। বিশ্বজুড়ে শহরগুলি যেন নতুন করে জেগে উঠছে, পুরনো ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে তৈরি হচ্ছে এক ভিন্ন জগৎ।
শিল্প, সংস্কৃতি আর সৃজনশীলতার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে অনেক এলাকার চিত্র। স্পেনের বার্সেলোনার পোবলেনউ তেমনই একটি জায়গা, যেখানে শিল্পীরা তাদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে একটি পুরনো শিল্পাঞ্চলকে নতুন রূপে সাজিয়ে তুলেছেন।
একসময় পোবলেনউ ছিল কাতালান টেক্সটাইল শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। উনিশ শতকের শেষ দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এখানে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য কারখানা ও গুদামঘর।
কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে শিল্প-কারখানাগুলি একে একে বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করে। এরপর শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়।
কম ভাড়ায় বড় স্টুডিওর খোঁজে এখানে আসতে শুরু করেন শিল্পী এবং সৃজনশীল মানুষেরা।
পাবলো পুলিডো, যিনি একজন আর্জেন্টাইন সিরামিক শিল্পী এবং জ্যাজ সঙ্গীতজ্ঞ, পোবলেনউতে আসার কারণ হিসেবে এখানকার আলো এবং সমুদ্রের নৈকট্যের কথা উল্লেখ করেন।
তাঁর মতে, এখানকার খোলা জায়গা এবং সমুদ্রের কাছাকাছি থাকার সুযোগ তাঁদের খুব আকৃষ্ট করেছে। পাবলো এবং তাঁর স্ত্রী ডায়ানা নুয়েজ শ্নাইডার, দুজনেই সিরামিক শিল্পী এবং শিল্প নকশাবিদ।
তাঁরা তাঁদের ‘কেমা’ নামের স্টুডিও তৈরি করেছেন। পোবলেনউতে তাঁদের মতো আরও অনেকে এসেছেন, তৈরি হয়েছে গ্যালারি, স্টুডিও এবং ছোট ছোট দোকান ও ক্যাফে।
পোবলেনউয়ের স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই এলাকার আসল আকর্ষণ হল এখানকার মানুষের মধ্যেকার সম্পর্ক। এখানকার বাসিন্দারা যেন একটি পরিবারের মতো।
স্থানীয় একটি ক্যাফেতে ১৫ ইউরোর বিনিময়ে মেনু দেল দিয়া উপভোগ করা যায়, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১,৮০০ টাকার সমান। রাস্তার পাশে বসে ছাত্রছাত্রীদের আড্ডা, পুরনো কারখানার স্থাপত্য, আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট—সবকিছু মিলিয়ে পোবলেনউ তৈরি করেছে এক ভিন্ন পরিবেশ।
আর্টিস্ট আসিস পেরকালস এবং জেরার্ড করনেলা তাঁদের স্টুডিওতে বসে সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করেন। তাঁদের মতে, শহরের কোলাহল থেকে দূরে, শান্ত পরিবেশে কাজ করার সুযোগ তাঁদের সৃজনশীলতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
ভেনেজুয়েলার গ্যালারি মালিক ক্লডিয়া কোস্টা ওরোপেজা মনে করেন, পোবলেনউ ছিল বার্সেলোনার ভবিষ্যৎ। তাঁর মতে, সমুদ্রের কাছাকাছি এবং শিল্পের জন্য উপযুক্ত স্থান হওয়ায় এখানকার গুরুত্ব বেড়েছে।
পেরিও পাস্তোর, যিনি নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং লা ভ্যানগার্ডিয়ার মতো সংবাদপত্রে কাজ করেন, পোবলেনউতে ২৫ বছর ধরে বসবাস করছেন।
তিনি বলেন, এখানকার পুরনো ঐতিহ্য এখনো বজায় আছে। এখানকার মানুষের আন্তরিকতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তাঁকে মুগ্ধ করে।
তাঁর মতে, পোবলেনউ শুধু শিল্পী বা সৃজনশীল মানুষের আবাসস্থল নয়, বরং এটি বিভিন্ন বয়সের, সংস্কৃতির মানুষের এক মিলনক্ষেত্র।
পোবলেনউ যেন শিল্প ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পুরনোকে নতুন করে সাজিয়ে, সৃজনশীলতার মাধ্যমে একটি এলাকার জীবনযাত্রাকে বদলে দেওয়ার এক অসাধারণ উদাহরণ এটি।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক