যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা দেশটির তেল ও গ্যাস শিল্পের ওপর নজরদারি কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে খবর, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
জানা গেছে, ইপিএ-এর কর্মীরা, বিশেষ করে মধ্য-পশ্চিম অঞ্চলের (Midwest) দূষণ-প্রবণ এলাকাগুলোতে, জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশগত বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের ওপর ব্যবস্থা নেওয়া বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সূত্রে প্রকাশ, কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হচ্ছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন শিল্পখাতকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাতিল করারও চেষ্টা চলছে, বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানির নির্গমন কমানোর নিয়মগুলো শিথিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইপিএ-এর একজন মুখপাত্র অবশ্য দাবি করেছেন যে, তেল ও গ্যাস শিল্পে পরিদর্শন এবং বিধি প্রয়োগ এখনও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, কর্মীদের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিধা রয়েছে।
ইপিএ-এর অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের পাশাপাশি, বিচার বিভাগের পরিবেশগত বিভাগে কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে এর কার্যক্রমও দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে জানা যায়। একজন ইপিএ কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “কোম্পানিগুলো যেন এখন আর কোনো পরোয়া করছে না, ইপিএ-এর আগের ক্ষমতা অনেকটাই কমে গেছে।”
মধ্য-পশ্চিম অঞ্চলে, বিশেষ করে ওহাইও-এর মতো তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোতে, এই নির্দেশনার প্রভাব স্পষ্ট। কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে, তেল ও গ্যাস শিল্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘অপেক্ষার নীতি’ অনুসরণ করতে হবে। এর ফলে, দূষণের অভিযোগে অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোকে এখন আর কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ বা তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে না।
ইপিএ-এর এই পদক্ষেপের ফলে, পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এর ফলে দূষণ বাড়বে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও খারাপ হবে। একইসঙ্গে, যারা পরিবেশ রক্ষার নিয়ম মেনে চলে, তাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে।
আরেকটি সূত্র জানাচ্ছে, টেক্সাস, লুইজিয়ানা এবং নিউ মেক্সিকোর মতো তেল ও গ্যাসের শক্তিশালী রাজ্যগুলোতেও পরিস্থিতি একই রকম। সেখানেও বিধি প্রয়োগ কার্যত স্থগিত করা হয়েছে। এমনকি, কোনো তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতি পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় ধাক্কা। এর ফলে, জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলো আরও বেশি সুবিধা পাবে এবং পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
অন্যদিকে, কিছু তেল ও গ্যাস কোম্পানিও মিথেন গ্যাস নির্গমন কমানোর পক্ষে মত দিয়েছে। তাদের মতে, মিথেন গ্যাস নির্গমন কমানো গেলে, তা থেকে মূল্যবান প্রাকৃতিক গ্যাস পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে, পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন