শিরোনাম: প্রেমিকের মৃত্যু: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারী কারেন রিডের বিচার, সাক্ষ্য-প্রমাণের লড়াই
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে বহুল আলোচিত একটি মামলায় কারেন রিড নামের এক নারীর বিচার চলছে, যিনি তার পুলিশ অফিসার প্রেমিক জন ও’কীফের মৃত্যুর জন্য অভিযুক্ত। এই মামলার শুনানি এখন শেষের দিকে, যেখানে পরস্পরবিরোধী সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যতা উন্মোচনের চেষ্টা চলছে।
২০১৬ সালে প্রথম বিচার ভেস্তে যাওয়ার পর, পুনরায় শুনানিতে প্রসিকিউশন এবং রিডের আইনজীবীরা মোট ৪৯ জন সাক্ষীকে হাজির করেছেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, কারেন রিড মদ্যপ অবস্থায় তার লেক্সাস এসইউভি (Lexus SUV) দিয়ে ও’কীফকে আঘাত করেন এবং পরে তুষারপাতের মধ্যে তাকে ফেলে রেখে যান, যার ফলে তার মৃত্যু হয়। প্রসিকিউশন, অর্থাৎ রাষ্ট্রপক্ষ, এই ঘটনার জন্য রিডকে দ্বিতীয়-ডিগ্রি হত্যা, মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং ঘটনার স্থল ত্যাগ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
তবে রিডের আইনজীবীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এটিকে একটি চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন। তাদের দাবি, ও’কীফকে আসলে অন্য কেউ হত্যা করেছে এবং রিডকে ফাঁসানো হয়েছে।
শুনানিতে উভয় পক্ষের সাক্ষীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের বক্তব্য পেশ করেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। সাক্ষীদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে ঘটনার রাতের বিভিন্ন দিক।
ঐ রাতের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানা যায়, কারেন রিড এবং জন ও’কীফ ক্যান্টন এলাকার একটি বারে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এরপর তারা সবাই একত্র হয়ে ৩১ বছর বয়সী জন ও’কীফের বন্ধু জেনিফার ম্যাককেবের (Jennifer McCabe) বাড়িতে যান। প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষী জেনিফার ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুর সাক্ষী ছিলেন।
তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার দিন সকালে রিড তাকে ফোন করে কান্নাকাটি করে ও’কীফের খোঁজ করতে বলেন। ম্যাককেবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে ও’কীফের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ম্যাককেবের ভাই-এর শ্বশুর ছিলেন স্থানীয় পুলিশের একজন সদস্য।
আরেক সাক্ষী কেরি রবার্টস (Kerry Roberts), যিনি ও’কীফের বন্ধু ছিলেন, তিনি ঘটনার সকালে রিডের গাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দেখেছিলেন বলে জানান। তিনি বলেন, রিড নিজেই তখন তার গাড়ির লাইটের কথা বলছিলেন।
অন্যদিকে, ব্রায়ান লখরান (Brian Loughran) নামের একজন স্নো-প্লাও চালক (snowplow driver) সাক্ষ্য দেন যে ঘটনার দিন ভোররাতে তিনি যখন ওই বাড়ির পাশ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তখন তিনি সেখানে কোনো মৃতদেহ দেখেননি।
সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তদন্তের দুর্বলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মামলার প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা, প্রাক্তন ম্যাসাচুসেটস স্টেট ট্রুপার মাইকেল প্রক্টর (Michael Proctor)-এর বিরুদ্ধে তদন্তে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সাক্ষ্য প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ফরেনসিক বিশ্লেষণ। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ও’কীফের শরীরে আঘাতের ধরন এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছেন। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ড. ইরিনি স্কোরদি-বেলো (Dr. Irini Scordi-Bello) জানান, ও’কীফের মাথার আঘাত এবং অতিরিক্ত ঠান্ডায় জমে যাওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে।
আরেকজন বিশেষজ্ঞ, নিউরোসার্জন ড. আইজিক ওলফ (Dr. Aizik Wolf) জানান, ও’কীফের আঘাতগুলো ‘ক্লাসিক ব্লান্ট ট্রমা’র (classic blunt trauma) মতো ছিল, যা কোনো শক্ত বস্তুর সাথে আঘাতের কারণে হতে পারে।
তবে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত একটি কুকুরের কামড়ের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট ড. মেরি রাসেল (Dr. Marie Russell) দাবি করেছেন, ও’কীফের শরীরে কুকুরের কামড়ের চিহ্ন ছিল।
ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ইয়ান হুইফিন (Ian Whiffin) ও’কীফের মোবাইল ফোনের ডেটা বিশ্লেষণ করে তার গতিবিধি সম্পর্কে জানান। ডেটা অনুযায়ী, ও’কীফের ফোনটি ঘটনার রাতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ছিল।
মামলার শুনানিতে, উভয় পক্ষই তাদের দাবির স্বপক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। তবে, সাক্ষীদের বক্তব্যে পাওয়া পরস্পরবিরোধী তথ্য এবং বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের ভিন্ন ভিন্ন মতামত এই মামলার বিচার প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)