মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, মেলিসা হর্টম্যান, যিনি একসময় বুরিতো বানানোর কাজ করতেন, তাঁর জীবনাবসান হয়েছে। শনিবার ভোরে মিনেসোটার ব্রুকলিন পার্কের নিজ বাসভবনে গুলি করে হত্যা করা হয় ডেমোক্রেটিক এই নেত্রী এবং তাঁর স্বামী মার্ক হর্টম্যানকে।

কর্তৃপক্ষের ধারণা, এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই রাজ্যের আরেকজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, সিনেটর জন হফম্যান ও তাঁর স্ত্রী, তাঁদের বাড়িতে হামলার শিকার হন।

মেলিসা হর্টম্যানের রাজনৈতিক জীবন ছিল অত্যন্ত বর্ণাঢ্য। তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, বরং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। একসময় যেখানে তিনি একটি রেস্টুরেন্টে চিলি-চিজ বুরিতো বানানোর কাজ করতেন, সেই তিনিই পরবর্তীতে রাজ্যের আইনপ্রণেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

২০১৬ সালে তিনি মিনেসোটা হাউসের স্পিকার নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হর্টম্যান ছিলেন উদারনৈতিক আদর্শের অনুসারী এবং বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে তাঁর আগ্রহ ছিল। দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য বিনামূল্যে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা ছিল তাঁর উল্লেখযোগ্য একটি পদক্ষেপ। এ বছর আইনসভায় ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা সমান হওয়ায় বাজেট নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দেয়।

সেই সংকট নিরসনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

হর্টম্যান শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন পশুপ্রেমীও। ভেটেরান বা যুদ্ধফেরত সৈনিকদের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর তৈরি করার কাজেও তিনি সহায়তা করতেন। ‘হেল্পিং পাওস’ নামক একটি সংস্থার মাধ্যমে তিনি এই সেবামূলক কাজটি করতেন।

মার্কিন সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার, যিনি হর্টম্যানের দীর্ঘদিনের বন্ধু ছিলেন, এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “মেলিসা হর্টম্যান ছিলেন এমন একজন মানুষ, যাঁর সম্পর্কে সারা দেশের মানুষের জানা উচিত। তিনি ছিলেন সত্যিকারের নেতা এবং নিজের কাজকে ভালোবাসতেন। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন একজন ভালো মানুষ।”

হর্টম্যানের হত্যাকাণ্ডের পর, মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।

মেলিসা হর্টম্যানের জীবনের উত্থান-পতন, তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ, এবং সমাজের প্রতি তাঁর অবদান— সবকিছুই মিনেসোটার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে শুধু মিনেসোটা নয়, গোটা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস