স্বাস্থ্যখাতে নতুন দিগন্ত: বয়স্কদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্যামসাং-এর স্মার্টওয়াচ।
বর্তমান বিশ্বে স্বাস্থ্যখাতে পরিবর্তন আসছে দ্রুতগতিতে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য করে তোলার চেষ্টা চলছে।
এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, বয়স্ক নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাং। স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তারা ডিজিটাল স্বাস্থ্যখাতে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে চাইছে।
ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যখরচ এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়, স্যামসাং তাদের স্মার্টওয়াচ প্রযুক্তির মাধ্যমে এই উভয় সমস্যার সমাধানে মনোযোগ দিচ্ছে।
স্যামসাং মোবাইল বিভাগের ডিজিটাল স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান, হন পাকের মতে, তাদের নতুন স্মার্টওয়াচ আপডেটের মূল লক্ষ্য হলো—ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে উৎসাহিত করা।
স্মার্টওয়াচ প্রস্তুতকারক হিসেবে অ্যাপলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে স্যামসাং বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্মার্টফোন ব্যবসার বাজারে কিছুটা ধীরগতি দেখা গেলেও, পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি বা ওয়ারেবল টেকনোলজির বাজারে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চাইছে তারা।
এই লক্ষ্যে, স্যামসাং তাদের গ্যালাক্সি ওয়াচ ৫ এবং এর পরবর্তী মডেলগুলোতে নতুন কিছু স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্ট ফিচার যুক্ত করতে যাচ্ছে। বর্তমানে সফটওয়্যারটির একটি বেটা সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে, তবে কিছু বিশেষ সুবিধা শুধুমাত্র নতুন মডেলগুলোতে উপলব্ধ হবে।
স্যামসাং মনে করে, স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তাদের একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। কারণ, বাজারে তাদের বিভিন্ন গৃহস্থালীর সরঞ্জাম এবং বিনোদনমূলক পণ্য আগে থেকেই বিদ্যমান।
এর ফলে, ব্যবহারকারীরা তাদের জীবনযাত্রার সাথে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো সহজে যুক্ত করতে পারবে।
বাজার গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাং শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে থাকলেও, স্মার্টওয়াচের বাজারে তাদের অবস্থান তুলনামূলকভাবে দুর্বল।
২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে স্মার্টওয়াচ বাজারে অ্যাপলের অংশীদারিত্ব ছিল প্রায় ২০ শতাংশ, যেখানে স্যামসাংয়ের অংশ ছিল মাত্র ৬ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাপল তাদের স্মার্টওয়াচকে স্মার্টফোনের একটি অত্যাবশ্যকীয় সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।
স্যামসাং এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং নিজেদের একটি বিশেষ স্থান তৈরি করতে চাইছে।
তারা ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলার উপর জোর দিচ্ছে, যাতে ব্যবহারকারীরা কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।
নতুন আপডেটে, ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণের পরিমাণ পরিমাপ করার একটি বিশেষ ফিচার যুক্ত করা হয়েছে।
এই ফিচারের মাধ্যমে, ত্বকের উপর এলইডি আলো ফেলে বিটা ক্যারোটিনের মাত্রা অনুমান করা যাবে।
গাজর, মিষ্টি আলু এবং পালং শাকের মতো খাবারে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়।
এছাড়াও, ঘুমের অভ্যাস উন্নত করতে এবং দৌড়ানোর প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম তৈরি করতে সহায়ক কিছু ফিচার যুক্ত করা হয়েছে।
অ্যাপলের ‘ওয়ার্কআউট বাডি’র মতই, স্যামসাংও ব্যবহারকারীদের জন্য এই ধরনের সুবিধা নিয়ে এসেছে।
ভবিষ্যতে, স্যামসাং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন স্মার্ট গ্লাস নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে।
এই গ্লাস ব্যবহার করে, একজন ব্যক্তি কত দ্রুত খাচ্ছেন বা খাবারে কোনো অ্যালার্জেন আছে কিনা, তা জানা যাবে।
স্যামসাং কর্তৃপক্ষের মতে, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা তাদের জন্য কোনো সমস্যা নয়।
বরং, বিদ্যমান প্রযুক্তিকে কিভাবে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়, সেদিকেই তারা মনোযোগ দিচ্ছেন।
বর্তমানে, স্যামসাং-এর স্মার্টওয়াচগুলো শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের সাথে কাজ করে।
অ্যাপলের প্রায় ২০ শতাংশ বাজার হিস্যা থাকার কারণে, আইফোনের সাথে তাদের ওয়াচের সংযোগ স্থাপন করতে না পারাটা একটি বড় সীমাবদ্ধতা।
যদিও অতীতে স্যামসাং আইফোনের সাথে তাদের ওয়াচ-এর সংযোগ স্থাপন করা বন্ধ করে দিয়েছিল, তবে ভবিষ্যতে অ্যাপলের সাথে কাজ করার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তথ্যসূত্র: সিএনএন