ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা: আকাশপথে আক্রমণের পর মৃতের সংখ্যা বাড়ছে
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে কয়েক দিনের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে।
উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে, যার ফলে মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।
ইরানের সামরিক স্থাপনা ও দেশটির পারমাণবিক কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলা এই পরিস্থিতির সূত্রপাত করেছে।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর এবং দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানা হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২৪ জন ইরানি নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ইসরায়েলের এই অভিযান কয়েক দিন নয়, বরং কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েলের এই হামলায় তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা “জড়িত হতে পারে”।
ইসরায়েলের আক্রমণের পর ইরানও এর প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং শহরগুলোতে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সোমবার জানিয়েছে, ইরান গত চার দিনের সংঘাতে ইসরায়েলের দিকে ৩৭0টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং কয়েক’শ ড্রোন নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে ৩০টি স্থানে আঘাত হেনেছে।
যদিও ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের কথা বলে আসছে, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই এটিকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আসছে।
ইসরায়েলি হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা—নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফরদো—আক্রান্ত হয়েছে।
স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফরদোতে তেমন কোনো ক্ষতির চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মতে, নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রটি ইরানের বৃহত্তম ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু।
সেখানকার বেশ কয়েকটি কাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনের ক্ষতি হয়েছে।
১৪ই জুনের স্যাটেলাইট চিত্রে তিনটি ভবনের ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া গেলেও, চতুর্থটির ক্ষতি এখনো স্পষ্ট নয়।
ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার একজন মুখপাত্র অবশ্য দাবি করেছেন, ওই এলাকার ক্ষতি সীমিত।
উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে কেরমানশাহ, শিরাজ ও বিড কানেহ-এর ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলোতেও হামলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কেরমানশাহ-এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভবন ও গাড়ির টানেল ধ্বংস হয়ে গেছে।
তবে, শিরাজে কোনো ভবন ধ্বংস হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
ইরান এরই মধ্যে শূন্যপদ পূরণের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।