ইরানের নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে সম্ভাব্য দূষণের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা। ইসরায়েলি বিমান হামলার পর এই উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ-এর প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি সোমবার এক বিবৃতিতে এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
সংস্থাটির প্রধানের মতে, নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে তেজস্ক্রিয় এবং রাসায়নিক উভয় ধরনের দূষণের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও কমপ্লেক্সের বাইরের এলাকার তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে।
তবে, সেখানকার কর্মীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে ইউরেনিয়াম- হেক্সাফ্লুরোরাইড গ্যাসের কারণে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে মারাত্মক হতে পারে।
গ্রোসি আরও জানান, উপযুক্ত সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে এই ঝুঁকি মোকাবেলা করা সম্ভব। যেমন – ওই এলাকার কর্মীদের শ্বাসযন্ত্র সুরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
আইএইএ’র জরুরি বৈঠকে গ্রোসি বলেন, শনিবারের পর থেকে নাতানজ এবং ইসফাহান পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে নতুন করে কোনো ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
তিনি উল্লেখ করেন, নাতানজ প্ল্যান্টের বাইরের তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়, নাতানজ-এর মূল উদ্বেগের কারণ হলো ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরোরাইড গ্যাসের রাসায়নিক বিষাক্ততা। এই গ্যাসটি অত্যন্ত উদ্বায়ী এবং ক্ষয়কারী।
এটি ত্বকের সংস্পর্শে এলে যেমন ক্ষতি করে, তেমনই শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে।
জাতিসংঘের এই সংস্থাটির প্রধান জোর দিয়ে বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আইএইএ-কে অবশ্যই এই কেন্দ্রগুলোর কারিগরি তথ্য নিয়মিতভাবে সরবরাহ করতে হবে। তথ্য না পেলে সংস্থাটি সেখানকার তেজস্ক্রিয় পরিস্থিতি এবং পরিবেশের ওপর এর প্রভাব সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারবে না।
এমনকি প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতেও পারবে না।
গ্রোসি আরও জানান, নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জাতিসংঘের পরিদর্শকরা ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে পরিদর্শন চালাবেন।
তিনি সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, এমনটা হলে জীবনহানির ঝুঁকি বাড়ে এবং পরিবেশের ওপরও এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
বৈঠকে ভেনেজুয়েলা, ইরান ও রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের নিন্দা করে একটি যৌথ বিবৃতি পেশ করেছে।
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নাতানজের প্রধান পারমাণবিক কেন্দ্রটিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর মধ্যে প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কিছু অবকাঠামোও রয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গ্রোসি জানিয়েছিলেন, নাতানজ কেন্দ্রের ভূ-উপরিস্থ অংশটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে, ভূগর্ভস্থ মূল কেন্দ্রটিতে আঘাত হানার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, ইসফাহানের একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রেও হামলা চালানো হয়েছে।
আইএইএ জানিয়েছে, সেখানে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ইউরেনিয়াম রূপান্তর কেন্দ্রও রয়েছে। তবে, নাতানজ বা ইসফাহানে তেজস্ক্রিয়তা বাড়েনি।
ফোরদো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যা একটি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত এবং বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা সুরক্ষিত, সেখানে কোনো ক্ষতির চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
এছাড়া ইরানের একমাত্র বাণিজ্যিক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বুশেহর এবং তেহরান গবেষণা কেন্দ্রও সাম্প্রতিক হামলার শিকার হয়নি।
উল্লেখ্য, আইএইএ’র ৩৫ সদস্যের যে কোনো দেশ এই ধরনের বৈঠকের আহ্বান জানাতে পারে।
গত সপ্তাহে, আইএইএ প্রথমবারের মতো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের প্রমাণ পায়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস