গাজায় খাদ্য বিতরণের কেন্দ্রগুলোর কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে সোমবার অন্তত ৩৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।
গাজায় খাদ্য বিতরণের জন্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খাদ্য সংগ্রহের জন্য আসা হাজার হাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালালে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই রাফাহ শহরের কাছের একটি জিএইচএফ কেন্দ্রের দিকে যাওয়ার সময় এবং অন্য একজন মধ্য গাজায় জিএইচএফ কেন্দ্রের দিকে যাওয়ার পথে নিহত হন।
এছাড়া আরও চারজন অন্য স্থানে নিহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ইসরায়েলি সেনারা ভোর ৪টার দিকে রাফাহ খাদ্য কেন্দ্রের নির্ধারিত সময় শুরুর আগে ফ্ল্যাগ রাউন্ডঅবাউটের কাছে জড়ো হওয়া হাজার হাজার ফিলিস্তিনির ওপর গুলি চালানো শুরু করে। এই সময় মানুষজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে।
তাদের মধ্যে হেবা জউদা নামের একজন জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে এই দৃশ্য নিয়মিত দেখছেন। পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির তথ্যমতে, সোমবার রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালে প্রায় ২০০ জন আহতকে আনা হয়। এর আগের দিন, প্রায় ১৭০ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই জিএইচএফ কেন্দ্রে যাওয়ার সময় বন্দুকের গুলিতে আহত হয়েছিলেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২ জুন থেকে খাদ্য কেন্দ্রগুলোর কাছে হওয়া গোলাগুলিতে ৩১ জন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে অতীতে তারা জানিয়েছে, সৈন্যদের অবস্থানের কাছে আসা সন্দেহভাজনদের লক্ষ্য করে সতর্কতামূলক গুলি চালানো হয়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থা ও প্রধান সাহায্য সংস্থাগুলো নতুন জিএইচএফ পদ্ধতির বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, এই ব্যবস্থা গাজার চাহিদা মেটাতে পারবে না এবং ইসরায়েল এটিকে সাহায্যের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা হামাসের দ্বারা সাহায্য বিতরণে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত মাসে কেন্দ্রগুলো চালু হওয়ার পর থেকে বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং সাহায্য প্রবেশের ওপর বিধিনিষেধের কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫,৩০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। তবে ইসরায়েল বলছে, তারা ২০,০০০ এর বেশি জঙ্গি নিকেশ করেছে।
হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়েছিল। এতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক ছিল।
এছাড়া জঙ্গিরা ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যাদের মধ্যে এখনো ৫৩ জন তাদের কাছে বন্দী রয়েছে।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস