ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে ইরানের সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্তব্যের পর, বিশ্বজুড়ে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে। নেতানিয়াহু মনে করেন, ইরানের বর্তমান সরকার দুর্বল এবং দেশটির জনগণের মধ্যে অসন্তোষ ব্যাপক।
তাঁর মতে, ইসরায়েলের পদক্ষেপের ফলে সম্ভবত ইরানের শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসতে পারে।
তবে, এই দাবি কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ইসরায়েলের সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে ইরানের জনগণের মধ্যে বিভেদ দূর হওয়ার পরিবর্তে, তারা একত্রিত হতে পারে।
এর ফলে, অভ্যন্তরীণ অসন্তোষের কারণগুলো চাপা পড়ে যেতে পারে এবং বর্তমান সরকারের প্রতি সমর্থন আরও বাড়তে পারে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ইরানের অভ্যন্তরে অনেকে মনে করেন, নেতানিয়াহুর এই ধরনের পদক্ষেপ তাঁদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে কোনো সাহায্য করবে না। বরং, এটি দেশের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
ইরানের নাগরিকরা ইসরায়েলি হামলার কারণে ভীত ও উদ্বিগ্ন। অনেকে তাঁদের পরিবার ও প্রিয়জনদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এই পরিস্থিতিতে, সরকার পরিবর্তনের জন্য রাস্তায় নামার মতো মানসিক বা বাস্তবিক পরিস্থিতি তাঁদের নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষ থাকলেও, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের কাছে, বিদেশি হস্তক্ষেপ একটি ‘লাল রেখা’। এমতাবস্থায়, নেতানিয়াহুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকার উৎখাত করার সম্ভাবনা খুবই কম।
অন্যদিকে, ইরানের বাইরে থাকা অনেক ইরানিও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন। তাঁদের মতে, এই ধরনের সামরিক অভিযান কোনো সমাধান নয়।
তাঁরা চান, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের পরিবর্তন হোক। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নার্গিস মোহাম্মাদিসহ আরও কয়েকজন বিশিষ্ট ইরানি মানবাধিকার কর্মী এক যুক্ত বিবৃতিতে এই যুদ্ধের অবসান দাবি করেছেন।
একইসঙ্গে, তাঁরা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ এবং সরকারের পদত্যাগেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোও পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন শীর্ষস্থানীয় উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেছেন, শক্তি প্রয়োগ করে এই অঞ্চলের পুনর্গঠন সম্ভব নয়।
এতে স্বল্প মেয়াদে কিছু সমস্যার সমাধান হতে পারে, তবে ভবিষ্যতে আরও গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
সব মিলিয়ে, ইরানের সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। নেতানিয়াহুর আশা কতটা পূরণ হবে, তা সময়ই বলবে।
তথ্য সূত্র: CNN