যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে এখনো চলছে আইনি লড়াই। বোস্টনের একটি আদালত ট্রাম্পের জারি করা নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়েছেন, ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের হার্ভার্ডে আসা আপাতত বহাল থাকছে।
আগামী ২৩শে জুন পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে বলে জানা গেছে।
আদালতে হার্ভার্ডের আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ‘ঘুঁটি’ হিসেবে ব্যবহার করছে।
আইনজীবীদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন মূলত হার্ভার্ডকে শায়েস্তা করতে চাইছে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়টি সরকারের কিছু নীতির সঙ্গে একমত পোষণ করেনি।
এই বিতর্কের সূত্রপাত হয় কয়েক মাস আগে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ‘অতিরিক্ত উদারপন্থী’ এবং ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ প্রসারের অভিযোগ আনে।
এরপর, হার্ভার্ডের গবেষণা খাতে বরাদ্দকৃত প্রায় ২.৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
একইসাথে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে সরকারি চুক্তি বাতিল করা হয় এবং করমুক্তির সুবিধাও কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
গত এপ্রিলে, ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি হার্ভার্ডের কাছ থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সম্পর্কিত কিছু তথ্য চেয়ে পাঠায়, যাদের বিরুদ্ধে কোনো ‘বিপজ্জনক’ বা ‘অবৈধ’ কার্যকলাপের অভিযোগ ছিল।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ সেই অনুরোধ মেনে তথ্য সরবরাহ করে।
তবে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরবরাহ করা তথ্যে ঘাটতি ছিল।
এর ফলস্বরূপ, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ হার্ভার্ডকে বিদেশি শিক্ষার্থী নেওয়ার অনুমতি (Student and Exchange Visitor Program) বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এমন পদক্ষেপ তাদের আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও গবেষণা কার্যক্রমের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
তারা জানায়, বিদেশি শিক্ষার্থী ছাড়া হার্ভার্ডের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।
এই নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বের সেরা শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতেও তাদের সমস্যা হবে।
এমতাবস্থায়, কিছু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে হংকংয়ের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীদের ভর্তির প্রস্তাব দিয়েছে।
আদালতে হার্ভার্ডের আইনজীবী জানান, ট্রাম্প প্রশাসন অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একতরফাভাবে নিশানা করছে।
অন্যদিকে, বিচার বিভাগের আইনজীবী দাবি করেন, গত দুই মাসে সরকার অন্যান্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমও খতিয়ে দেখেছে।
তিনি আরও যোগ করেন, হার্ভার্ড চাইলে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।
আদালতে শুনানিতে বিচারক অ্যালেসন বারোজ এই মামলার গুরুত্ব উল্লেখ করেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীর সংখ্যা কম হওয়া নিয়েও মন্তব্য করেন।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার জানিয়েছেন, তারা ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, কিন্তু সরকারের নির্দেশ মেনে তারা তাদের ‘ core, legally-protected principles’ থেকে সরবেন না।
তথ্য সূত্র: সিএনএন