মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তাবিত কর হ্রাসের পরিকল্পনা কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান দলের নেতারা এই করছাড়ের মাধ্যমে অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিলেও, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর ফল তেমন উৎসাহব্যঞ্জক নাও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা, কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে সম্প্রতি একটি বিল পাশ হয়েছে, যা ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত। এই বিলে প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের করছাড়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। হাউস স্পিকার মাইক জনসন একে ‘ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক উন্নতির’ চাবিকাঠি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, এই বিলের মাধ্যমে সবার আয় বাড়বে।
কিন্তু বিভিন্ন গবেষণা ও বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এই বিলটি অর্থনীতিকে তেমন একটা বেগ দিতে পারবে না। বরং, এতে সরকারের বাজেট ঘাটতি আরও বাড়তে পারে। যেমন, ট্যাক্স ফাউন্ডেশনের মতে, এই বিল অর্থনীতিতে প্রায় ০.৮ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটাতে পারে, যেখানে ২০১৭ সালের কর হ্রাসের ফলে ১.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এমনকি, এই বিলের কারণে আগামী দশ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বাজেট ঘাটতি ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৮৭ লক্ষ কোটি টাকার মতো।
অন্যদিকে, পেন-হোয়ার্টন বাজেট মডেলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই বিলের কারণে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত অর্থনীতিতে মাত্র ০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি হতে পারে, কিন্তু একই সময়ে ঘাটতি বাড়বে ৩.২ ট্রিলিয়ন ডলার। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কিভাবে আসবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
বিলটিতে মূলত ব্যক্তিগত করছাড়ের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এই বছরের শেষে শেষ হওয়ার কথা। এছাড়াও, কিছু করছাড়ের সুযোগ বাড়ানো হয়েছে, যেমন—শিশু কর ক্রেডিট বৃদ্ধি এবং কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স মওকুফ করা ইত্যাদি। তবে কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর ক্ষেত্রে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা বিশেষজ্ঞদের মতে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য জরুরি।
সেনেটে এই বিলের একটি সংস্করণ নিয়ে আলোচনা চলছে। সেখানে কিছু কর্পোরেট ট্যাক্স সুবিধা স্থায়ী করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। তবে এর ফলে সরকারের ব্যয় আরও বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে পারলে অর্থনীতির উন্নতি আরও দ্রুত হতে পারে।
এই বিল নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, বিশেষজ্ঞদের এই ধরনের মূল্যায়ন সঠিক নয়। তারা দাবি করেন, আগের করছাড়ের মাধ্যমেও তারা উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নতি এনেছিলেন। তবে চূড়ান্ত ফলাফল জানতে হলে, বিলটি উভয় কক্ষে পাশ হওয়ার পর এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন