মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। জানা গেছে, আইডাহো অঙ্গরাজ্যে জরুরি পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার পক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বাইডেন প্রশাসনের দায়ের করা একটি মামলার ধারাবাহিকতায় এমনটা হতে যাচ্ছে, যেখানে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
আইডাহোর সবচেয়ে বড় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ফেডারেল সরকারের এই মামলা খারিজ হয়ে গেলে তাদের রোগীদের রাজ্যটির বাইরে নিয়ে যেতে হতে পারে, কারণ সেখানে জরুরি পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের সুযোগ নেই। এর ফলে, সেখানকার চিকিৎসকদের জরুরি পরিস্থিতিতে গর্ভপাত ঘটানোর অনুমতি চেয়ে আদালতে একটি অস্থায়ী আদেশ চেয়ে আবেদন করতে হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে আলোচনার পর সেন্ট লুক’স হেলথ সিস্টেম জানিয়েছে, খুব সম্ভবত আগামী বুধবারের মধ্যেই তারা এই মামলা থেকে সরে আসতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল ক্ষমতায় আসার পর গর্ভপাত সংক্রান্ত নীতিতে এটিই তাদের প্রথম বড় পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে। এর আগে, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকজন রক্ষণশীল বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছিলেন, যারা ২০২২ সালে দেশব্যাপী গর্ভপাতের অধিকার বাতিল করার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন।
গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার পর জরুরি বিভাগে আসা অনেক গর্ভবতী নারীকে চিকিৎসা সেবা দিতে সমস্যা হয়েছে, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফেডারেল রেকর্ড অনুযায়ী, গর্ভপাত বন্ধের পর জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা পাওয়া নিয়ে জটিলতা বেড়েছে।
বাইডেন প্রশাসন আইডাহোর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় যুক্তি দেখিয়েছিল, ফেডারেল আইন অনুযায়ী, রোগীর জীবন বা স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকলে জরুরি পরিস্থিতিতে গর্ভপাত করাতে হবে। এমনকি রাজ্যের গর্ভপাত বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এই নিয়ম মানতে হবে।
অন্যদিকে, আইডাহো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তাদের রাজ্যের আইনে জীবন-হুমকির পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের সুযোগ রয়েছে। তাদের মতে, ডেমোক্র্যাট সরকার আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এই সুযোগ আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইডাহো মামলার শুনানিতে জানায়, হাসপাতালগুলো জরুরি পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তবে, আদালতের এই রায়ে মামলার মূল বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়নি। বিষয়টি নিয়ে এখনও নবম সার্কিট কোর্ট অব আপিলসে শুনানি চলছে।
আইডাহোর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রায়ান চার্চ আদালতের কাছে সেন্ট লুক’স হাসপাতালের আবেদন খারিজ করার আবেদন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফেডারেল আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে রাজ্যের আইনসভার ক্ষমতা খর্ব করতে চাইছে। চার্চ আরও বলেন, রাজ্যের নীতি পরিবর্তনে আদালতের পরিবর্তে জনগণের রায় প্রয়োজন।
প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫০ হাজার নারীর গর্ভাবস্থায় জীবন-হুমকি সৃষ্টিকারী জটিলতা দেখা দেয়, যেমন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, সেপসিস বা প্রজনন অঙ্গের ক্ষতি। অনেক সময়, ভ্রূণের বাঁচার সম্ভাবনা না থাকলে চিকিৎসকদের রোগীর জীবন বাঁচাতে গর্ভপাত ঘটানোর প্রয়োজন হয়।
আইডাহোতে যখন জরুরি পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, তখন অনেক চিকিৎসক জানিয়েছেন, গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসা পেতে দেরি হতো এবং তাদের অন্য রাজ্যে পাঠাতে হতো।
আইন অনুযায়ী, জীবন বাঁচানোর জন্য গর্ভপাতের সুযোগ থাকলেও, ঠিক কখন একটি পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে, তা বলা কঠিন।
গর্ভপাত বিষয়ক অন্য একটি মামলায়, ট্রাম্প প্রশাসনকে তাদের অবস্থান পরিবর্তনের জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এই মামলায়, আইডাহো, কানসাস এবং মিসৌরি রাজ্য গর্ভপাতের বড়ি ‘মিফেপ্রিস্টোন’ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাইছে। বাইডেন প্রশাসনের সময় সরকার এর পক্ষে ছিল।
২০২২ সাল থেকে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলো গর্ভপাতের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে। বর্তমানে, ১২টি রাজ্যে গর্ভপাতের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে, যেখানে খুব সীমিত কিছু ক্ষেত্রে এর অনুমতি দেওয়া হয়। এছাড়াও, চারটি রাজ্যে গর্ভাবস্থার ছয় সপ্তাহের মধ্যেই গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে নারীরা তাদের গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি জানার আগেই কার্যকর হয়ে যায়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস