চীনের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ: ৫ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বহাল রাখল বেইজিং
চীন তাদের অর্থনীতির জন্য ২০২৫ সালের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এই ঘোষণা করেন।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই লক্ষ্য নির্ধারণের মূল উদ্দেশ্য হলো কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। তবে, অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সরকার বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইছে না। চীনের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক – উভয় পরিবেশেই কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ দুর্বল চাহিদা এবং ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি কমে যেতে পারে। বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বহিরাগত চাপও একটি উদ্বেগের কারণ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি বছর চীনের অর্থনীতিতে ৪.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে, যা গত বছর ছিল ৫ শতাংশ।
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা। এছাড়া, অতি-দীর্ঘমেয়াদী বন্ডের পরিমাণ ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান থেকে বাড়িয়ে ১.৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৯ লক্ষ কোটি টাকা) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বন্ডের ৩০০ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৪২ লক্ষ কোটি টাকা) ব্যবহার করা হবে গাড়ি বা ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী বদল করে নতুন পণ্য কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের ভর্তুকি দেওয়ার জন্য।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, যা এখনো দেশটির অর্থনীতির জন্য একটি বড় হুমকি। এছাড়া, রিয়েল এস্টেট খাতে মন্দা এবং ভোক্তাদের ব্যয় সংকোচনও উদ্বেগের কারণ।
ডিসেম্বরে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অর্থনীতিকে চাঙা করতে বিভিন্ন পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি সেই কাজটি আরও জরুরি করে তুলেছে, কারণ এটি চীনের প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে।
একইসঙ্গে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেশটির অর্থনীতিকে রিয়েল এস্টেট বাজারের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছেন। তিনি প্রযুক্তিখাতে আরও বেশি বিনিয়োগের ওপর জোর দিচ্ছেন। বিশেষ করে, উন্নত সেমিকন্ডাক্টর এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের চেষ্টা করছেন, যাতে অন্য কোনো দেশের ওপর তাদের নির্ভর করতে না হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সরকার প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে এবং এই লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মুদ্রানীতি স্থিতিশীল থেকে ‘নরম’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে সরকারি ঋণ বাড়ানো এবং ভোক্তা ভর্তুকি কর্মসূচি সম্প্রসারণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, এই পদক্ষেপগুলো অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনতে এবং প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে কতটা সহায়ক হবে? এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত এখনো আসেনি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস